দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত আছে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট। চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহন বিঘিœত হচ্ছে। লাইটারেজ জাহাজ বন্ধ থাকায় বহির্নোঙরে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। আটকা পড়েছে ১৩ লাখ টন পণ্যবোঝাই ৮৮৪টি লাইটারেজ জাহাজ। বহির্নোঙরে ৩৭টি মাদার ভ্যাসেলে আটকা পড়েছে ১৪ লাখ ৩২ হাজার টন বিভিন্ন ধরনের আমদানি পণ্য। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার ডলার অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে মাদার ভ্যাসেলগুলোকে। বিভিন্ন নদীবন্দরে পণ্যসহ আটকা পড়েছে শত শত জাহাজ। ধর্মঘটের কারণে বন্দরে জাহাজ জট ও বাজারে আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটে নামলেও মহামারীকালে আপাতত খাদ্যভাতা পেলে কর্মসূচি স্থগিত করবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম। এদিকে বসুন্ধরা গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ ও সিটি গ্রুপ আগেই শ্রমিকদের খাদ্যভাতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে দাবি-দাওয়া নিয়ে অন্যান্য নৌযান মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের সমঝোতা না হওয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘট গতকাল দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন গতকাল নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, আপাতত খাদ্যভাতা বিষয়ে আশ্বাস পেলে ধর্মঘট প্রত্যাহারে শ্রমিকদের মানানো যেত। তবে নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক গতকাল বলেন, এই করোনাকালে এমনিতেই সবাই কোণঠাসা অবস্থায় আছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা যাচ্ছে। তার মধ্যে শ্রমিকদের ‘অযৌক্তিক’ দাবি মানা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ধরনের আন্দোলনও অযৌক্তিক। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তিনি শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানান। খাদ্যভাতা দেওয়ার বিষয়ে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশও রয়েছে। এদিকে ধর্মঘট সফল করতে গতকাল দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নৌযান শ্রমিকরা।
এ সময় তারা নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, খাদ্যভাতা প্রদান, নৌপথে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধ, ভারতগামী জাহাজের শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস প্রদানসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান। দাবি আদায় না হলে যাত্রীবাহী জাহাজেও ধর্মঘটের হুমকি দেন তারা। জানা গেছে, বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে প্রায় পাঁচ হাজার জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজে কর্মরত আছেন প্রায় ২ লাখ শ্রমিক। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য- চট্টগ্রাম : ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল সূত্র জানায়, সারা দেশের ৩৮টি ঘাটে ৮৮৪টি লাইটারেজ জাহাজ ১২ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৮ টন পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছে। এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। জাহাজগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গম, ভুট্টা, ডাল, সার, চিনি, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, কয়লা, ভোজ্যতেল ইত্যাদি পণ্য রয়েছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীতে ৩৭৬টি লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে। বন্দরের বহির্নোঙরে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৬২৭ টন পণ্য নিয়ে খালাসের অপেক্ষায় আছে ১৯টি মাদার ভ্যাসেল। এ ছাড়া বিভিন্ন বড় আমদানিকারক ও শিল্প গ্রুপের আমদানিকৃত ৯ লাখ ৫ হাজার ৩৪১ টন পণ্য নিয়ে ১৮টি মাদার ভ্যাসেল আটকা পড়ে আছে। লাইটারেজ জাহাজের কার্যক্রম শুরু না হলে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ এই ৩৭টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস সম্ভব হবে না। এদিকে বন্দরের বহির্নোঙরে একটি মাদার ভ্যাসেলকে বসে থাকতে হলে এক দিনের জন্য অতিরিক্ত ১০ হাজার ডলার বাড়তি খরচ গুনতে হয়। এতে দেশে বিভিন্ন আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বরিশাল : বরিশাল নদীবন্দরের আশপাশের এলাকায় কীর্তনখোলা নদীতে নোঙর করে রয়েছে অর্ধ শতাধিক পণ্য ও জ্বালানিবাহী জাহাজ। ধর্মঘটের কারণে পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘট সফল করতে গতকাল সকালে নগরীর কেডিসি ঘাট এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর তীরে বিক্ষোভ মিছিল করেন নৌযান শ্রমিকরা।ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দরে নৌ-ধর্মঘটের কারণে জ্বালানি তেল, সার, রড, সিমেন্ট, পাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছে অর্ধশতাধিক জাহাজ। পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ রয়েছে।