বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী

স্বীকৃতি দিন প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের অর্থনৈতিক অবদান শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় এটা বিশ্বের অর্থনীতিতেও অনস্বীকার্য। এ জন্য বিশ্ব অর্থনীতিতে এর স্বীকৃতি দিতে বিশ্বব্যাংককে আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। 

করোনা মহামারীর কারণে এবার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংস্থা দুটির বার্ষিক সভার এক সেশনে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এতে অংশ নেন আইএমফের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্ট উয়িং শেফার, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী আবদুল হাদী আরগান্ধীওয়াল, ভুটানের  অর্থমন্ত্রী লায়নপো নামগে শেরিং, ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, মালদ্বীপের অর্থমন্ত্রী ইবরাহিম আমির, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. যুবরাজ খাতিওয়াদা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী এবং দারিদ্র্য দমন ও সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. সানিয়া নিশতার এবং শ্রীলঙ্কার শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর জি এল পিরিস। পরে অর্থমন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলাতে বাংলাদেশ সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কভিড-১৯ এর অপ্রত্যাশিত অভিঘাত থেকে উদ্ভূত প্রাসঙ্গিক বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। আপনারা সবাই অবশ্যই অবগত যে বাংলাদেশ বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা  বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। বাংলাদেশে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তববাদী নেতৃত্ব এবং দেশে-বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করা নাগরিক। বিশ্বব্যাংক ও অন্যরা অনুমান করেছিল যে করোনার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্সের পরিমাণ হ্রাস পাবে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি, বিশেষত গ্রামীণ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে গার্হস্থ্য চাহিদা এবং প্রণোদিত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে সবাইকে অবগত করতে চাই যে, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সে সবসময়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গিয়েছে এবং সম্প্রতি এটি ত্বরান্বিত হয়েছে। আমরা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্জন করেছি। যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

তিনি ওই সেশনে আরও বলেন, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স রেকর্ড হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বেশি। সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা নীতি এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবিদার। তাই আমাদের রেমিট্যান্স মোটেও কমেনি বরং বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী আমাদের প্রায় ১১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেন। মালয়েশিয়ার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সে দেশে যে সব ব্যবস্থাপক পর্যায়ে বিদেশি রয়েছেন তার ৩৭ শতাংশই বাংলাদেশি নাগরিক। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, তবুও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বন্ধের কারণে গৃহবন্দী অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বেগ উপেক্ষা করা যায় না। গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯৮ জন শ্রমিক ফিরে এসেছেন। যদিও বিশ্বব্যাপী মোট প্রবাসী বাংলাদেশিদের তুলনায় এটি বড় সংখ্যা নয়। তারপরও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত নতুন এবং পুরনো মিলিয়ে ২ লাখ ৮৪ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত দেখা গেছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি মাসে প্রায় ৬০,০০০ কর্মী বিদেশে নিযুক্ত হন। আমাদের সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কর্মীদের স্বল্পতম সময়ের মধ্যে চাকরি নিয়ে বিদেশে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করছে। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, ইতিমধ্যে আমাদের প্রবাসী কর্মীরা বিদেশে ফিরে কাজ শুরু করছেন।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এপ্রিল এবং মে মাসে কভিড-১৯ ছুটির সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য বিদেশে গমনকারীদের জন্য ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদেশে চাকরি হারানো প্রত্যাবাসীরা ৮৩ মিলিয়ন ডলার বাজেটের পুনর্বাসন কর্মসূচির জন্য তালিকাভুক্ত হন এবং তাদের অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা পরিকল্পনারও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শুধু চলতি অর্থবছরেই ২,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

দেশে এবং বিদেশে আমাদের এই কর্মীরা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এই কর্মীদের কষ্টের স্বীকৃতি দিতে বিশ্বব্যাংকে আহ্বান করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের এবং বিশ্বের অগ্রগতির প্রবাহ ধরে রাখতে আমাদের কর্মীরা কষ্ট মন্ত্রে মুগ্ধ। তাই আমি অত্যন্ত খুশি হব, যদি বিশ্ব ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এ অর্জন বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে স্বীকৃতি পায়। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের প্রতিটি বড় বড় শহরে কর্মরত এসব কর্মীর  বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার প্রশংসা কেবলমাত্র আমাদের মানুষকে নয় বিশ্বব্যাপী সব প্রবাসী কর্মীকে উৎসাহিত করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর