মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির আদেশ পাওয়া সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর গতকাল এই পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। লাল কাপড়ে মুড়ে পরোয়ানাটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সর্বশেষ দন্ড কার্যকরের চার বছর পর কোনো আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হলো। ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে। গতকাল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার সাঈদ আহমেদ বলেন, বুধবার দুপুরের পর আমরা পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পেয়েছি। তাই নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মৃত্যুদন্ড পাওয়া ৮০ বছর বয়সী মুসলিম লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতার সামনে অবশ্য নিজেকে রক্ষা করার আরও দুটি সুযোগ রয়েছে। আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনা বা রিভিউ আবেদন করতে পারবেন তিনি। সেটি নাকচ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে। কায়সারের আইনজীবী এস এম শাহজাহান জানান, আমরা অবশ্যই রিভিউ আবেদন করব। আশা করি সফল হব। কায়সারের আরেক আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমিন বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেয়েছি। রিভিউ করতে সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করেছি। কপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আমরা রিভিউ করব। ২০১৩ সালের ১৫ মে গ্রেফতার করা হয় কায়সারকে। বয়স ও স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তাকে জামিনও দেওয়া হয়। ১৬টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পরের বছর ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় বিচার। বিচার শেষে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদন্ডের রায় আসে। মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জ মুসলিম লীগের এই নেতাকে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণসহ সাতটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ধর্ষণে জন্ম নেওয়া এক যুদ্ধশিশুও সাক্ষ্য দেয় তার বিরুদ্ধে। অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যায় সংশ্লিষ্টতার চারটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদন্ড এবং তিনটি অভিযোগে আরও ২২ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিরুদ্ধে কায়সার আপিল করলে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি সাজা বহাল রাখে আপিল বিভাগ।