শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বৃষ্টিতে অচল জনজীবন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃষ্টিতে অচল জনজীবন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টানা বর্ষণে ডুবে গেছে চট্টগ্রামের সড়ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দেশে অবিরাম বৃষ্টিতে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় ও গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে গভীর নিম্নচাপটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চল ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করেছে। নিম্নচাপের প্রভাবে বরিশাল, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, নোয়াখালীসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অনেক মাছের ঘের। রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে গতকাল সারা দিন কোথাও থেমে থেমে, কোথাও অবিরাম বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। এতে থমকে যায় স্বাভাবিক জনজীবন। আবহাওয়া অফিস গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছে, রাতের মধ্যেই নিম্নচাপের প্রভাব অনেকটা কেটে যাবে। আজ দুপুরের মধ্যে দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টিপাত থেমে দেখা দিতে পারে রোদ। তবে রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় অনেক স্থানে লাগতে পারে শীতের অনুভূতি।

বাংলাদেশের স্বাভাবিক ঋতুবৈচিত্র্যে কার্তিক মাসের হালকা বৃষ্টির পরই হাজির হয় শীত। ঘাসের ডগায় দেখা দেয় শিশির বিন্দু। আবহাওয়া অফিস বলছে, দেশের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। তবে এখনই শীত আসছে না। আরও কয়েক দফা বৃষ্টির পর কার্তিকের শেষ দিকে, অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি নামতে পারে শীত। আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিম্নচাপটি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমের পর বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। আজ দুপুরের মধ্যে দেশের বৃষ্টিপাত কমে আসবে। কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। সহসা আর কোনো নিম্নচাপের পূর্বাভাস নেই। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীত শীত অনুভূত হচ্ছে। তবে এ মাসেই শীত নামার সম্ভাবনা নেই। নভেম্বরের মাঝামাঝি উত্তরাঞ্চল দিয়ে শীতের আগমন ঘটতে পারে।

এদিকে মাঠে আগাম আমন ধানে যখন পাক ধরেছে, সেই মুহূর্তে এমন ভারি বর্ষণে দিশাহারা কৃষক। শীতকালীন সবজি নিয়েও বিপাকে কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পর অসময়ের বৃষ্টিতে আলু, আগাম আমন ও শীতকালীন সবজির বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি ও ঝড়ে অনেক এলাকায় নুয়ে পড়েছে ধান। সারা দেশে ১ লাখ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়। ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু লাগানো হয়েছে। বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় আলু ও সবজির খেতে পানি জমেছে। কৃষি বিভাগ থেকে পানি নিষ্কাশনে কৃষককে নানা পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে গতকাল সারা দিন রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। কাজে বের হতে পারেনি অসংখ্য শ্রমজীবী। কাদা পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট।

বৈরী আবহাওয়ায় পদ্মা নদী উত্তাল থাকায় কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে গতকাল সকাল থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ ছিল। নাব্য সংকটে আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। ফলে বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ। টানা বৃষ্টি ও নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল ৩-৪ ফুট অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর-

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে টানা বর্ষণে নগরবাসীর বেড়েছে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি। গতকাল সকাল থেকে দিনভর কখনো থেমে থেমে কখনো মুষলধারে বৃষ্টি পড়েছে। নগরের নিম্নাঞ্চলে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক মূল সড়ক, উপসড়ক। অসময়ের বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। দিনভর বৃষ্টির কারণে নগরের নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। নগরের দুই নম্বর গেট সড়ক, জিইসি মোড়, কাতালগঞ্জ, বাদুরতলা, চকবাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এালাকা, হালিশহর, ছোটপুল, বড়পুলসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে।

বরিশাল : বরিশাল নদীবন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. কবির হোসেন জানান, নিম্নচাপের কারণে সমুদ্র বন্দরে ৪ নম্বর এবং নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এদিকে হঠাৎ স্থানীয় রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বরিশাল নদীবন্দর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী হাজার হাজার নৌযাত্রী। নিম্নচাপের প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। বরিশালের কীর্তনখোলা, মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে গতকাল সকালে। অব্যাহত বৃষ্টি এবং নদীর পানির অস্বাভাবিক চাপের কারণে বরিশালের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। 

পটুয়াখালী : সাগর উত্তাল থাকায় গত দুই দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে পটুয়াখালীর উপকূল জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে গতকাল দুপুরের পর বৃষ্টি থেমে গেলে এবং পানির টান পড়লে মানুষের মাঝে ফিরে আসে কর্মচাঞ্চল্য। এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুনমুখা নদীতে স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় ১২ জনকে উদ্ধার করা হলেও সর্বশেষ ২৫ ঘণ্টা পরও পাঁচজন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে শহরসহ নিম্নাঞ্চল, মাছের ঘের ও ফসলি জমি।

চাঁদপুর : চাঁদপুর নৌ-বন্দরকে স্থানীয়ভাবে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেতের কারণে চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে চলাচলকারী ছোট লঞ্চগুলো চলাচল বন্ধ রয়েছে। চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ গতকাল সকাল থেকে এই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়। চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ জানান, গতকাল থেকেই আবহাওয়া ভালো না থাকায় শুক্রবার সকাল থেকে চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটের সবকটি লঞ্চ চলাচল পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

বাগেরহাট : উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে দুই দিন ধরে অবিরাম ভারি বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে প্রায় এক হাজার চিংড়ি ঘের (খামার) ও পুকুরের মাছ। মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। হাজার হাজার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় রান্না-খাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। অসময়ে অবিরাম ভারি বৃষ্টিপাতে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়া পরিবারগুলো অবর্ণনীয় দুর্দশায় পড়েছে। এদিকে অবিরাম ভারি বৃষ্টিপাতে মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নোয়াখালী : নোয়াখালীতে বৃষ্টি এবং সামুদ্রিক জোয়ারের তীব্রতা বেড়েছে। হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রামের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া হাতিয়া-চেয়ারম্যানঘাট নৌরুটে বিআইডব্লিউ সি-ট্রাক চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর