সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

যুক্তফ্রন্ট ও বিএনএ বিলীনের পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য গড়ে জোটটি। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী ও তার দলের মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান। এরপর আর জোটের কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। জোটের অন্য ছোট শরিকরা মনঃক্ষুণœ হয়ে এখন নিজেদের দল নিয়েই ব্যস্ত। অন্যদিকে ভোটের আগে জোট গড়েন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তার নেতৃত্বে নামসর্বস্ব ২৯টি দল জোটবদ্ধ হলেও এখন সবাই ‘একলা চলো’ নীতিতে রাজনীতি করছে। কার্যত যুক্তফ্রন্ট ও বিএনএ এখন বিলীনের পথে। যুক্তফ্রন্টের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ‘যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা যুক্তফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দিইনি। তবে বাজেট-পরবর্তী আলোচনা সভার পর থেকে আমরা জোটের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিইনি।’ জোটের শরিক দলের নেতাদের দাবি, ১১টি দল ও কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলেও লাভবান হয়েছে একমাত্র বিকল্পধারা। জোটের অন্য দলগুলোর কথা চিন্তা না করে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছেন। তারা দুটি আসন পেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলও শুধু মাহী বি. চৌধুরী ও মেজর মান্নানের দুটি আসনে ছাড় দিয়েছে। অন্য কোনো দলের নেতাদের ছাড় দেয়নি। এর পরও কেউ কেউ নির্বাচন-পরবর্তী সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু তা না পেয়ে সবাই হতাশ। তাই সবাই জোট ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বি চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপিকে ১৫০ আসন ও জামায়াতকে ত্যাগ করার শর্ত দিলে তাদের বাদ দিয়েই ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। এরপর বি চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। এই জোটের শরিকেরা হলো- বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বিএলডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপি, জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি, গণসাংস্কৃতিক দল, বাংলাদেশ জনতা লীগ, বাংলাদেশ শরিয়া আন্দোলন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্ট। দলগুলোর মধ্যে বিকল্পধারা, ন্যাপ ও গণফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত।

এর আগে বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে ২৯টি দল নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) নামের নতুন একটি রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ওই নতুন জোটের দলগুলো হলো- বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি), বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, জাগো বাঙালি, ইউনাইটেড মাইনোরিটি পার্টি, সম্মিলিত নাগরিক পার্টি (ইউসিপি), বাংলাদেশ ইনসাফ পার্টি, দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (বিকেএসপি), স্বাধীন পার্টি (এসপি), বাংলাদেশ প্রগতিবাদী জনতা পার্টি (বিপিজেপি), বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিপিডিপি), গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, গণতান্ত্রিক ন্যাপ, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্ট, ন্যাশনাল লেবার পার্টি (এনএলপি), বাংলাদেশ সচেতন হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি। নতুন জোটের অন্য দলগুলো হলো- বাংলাদেশ তফসিল ফেডারেশন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন, গণসংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ গণশক্তি পার্টি (বিজেএসপি), বাংলাদেশ দুনিয়া দল, বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি (বিআরপি) ও বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। এর মধ্যে কয়েকটি দল যোগ দেয় যুক্তফ্রন্টে। দু-একটি বাদে সবগুলোই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনহীন। এ প্রসঙ্গে বিএনএ চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জোট হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সবাই নিজেদের মতো করে দল চালাচ্ছে। আমার তৃণমূল দলেরও নিবন্ধন নেই। তাই এখন আমরা নিজেদের দল গোছানো নিয়েই ব্যস্ত আছি। দলকে শক্তিশালী করে নিবন্ধন করা হবে। এরপর প্রয়োজন হলে আবার জোটকে সক্রিয় করা হবে। নইলে এভাবেই চলব।’

সর্বশেষ খবর