বরগুনার চাঞ্চল্যকর শাহনেওয়াজ রিফাতকে (রিফাত শরীফ) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার মামলায় ১১ অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে আদালত। গতকাল দুপুরে বরগুনা শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান ছয়জনকে ১০ বছর করে, চারজনকে পাঁচ বছর করে এবং একজনকে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০ বছর করে সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো. আবু আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান (১৬), মো. ওলিউল্লাহ অলি (১৬), মো. নাইম (১৭) ও মো. তানভীর হোসেন (১৭)। এ ছাড়া পাঁচ বছর করে কারাদন্ড হয়েছে- জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫) ও মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লার (১৭)। তিন বছর কারাদন্ড পেয়েছে প্রিন্স মোল্লা (১৫)। খালাস পেয়েছে আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬), রাতুল সিকদার জয় (১৬) ও মারুফ মল্লিককে (১৭)।
বরগুনা শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় ৬৩ দিনের কার্যদিবসে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে রায় দেওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আসামিদের যে সাজা দেওয়া হয়েছে তা আগামী দিনে কিশোর অপরাধ নির্মূলে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোস্তফা কাদের বলেন, আসামিরা যেহেতু হত্যা মামলার আসামি অন্য শিশুরা ভয় পেতে পারে কিংবা আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে। এই বিবেচনায় তাদের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে না পাঠিয়ে বরগুনা জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, আমার ছেলের আত্মা একটু হলে শান্তি পাবে। এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর এই মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় হয়। রায়ে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নিসহ ছয়জনের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। খালাস দেওয়া হয়েছে বাকি চার আসামিকে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রিফাত শরীফকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। রিফাতের ওপর হামলার ছয় দিন পর ২ জুলাই ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।
রিফাত হত্যার দুই মাস ছয় দিন পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বরগুনার শিশু আদালত।