সড়ক নির্মাণের সময় পানি চলাচলের বিষয়টি খেয়াল রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া প্রয়োজনে পর্যাপ্ত কালভার্ট-ব্রিজ নির্মাণ করারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়ালে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সভা শেষে শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম প্রকল্পের সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, সড়ক তৈরির সময় পানি চলাচলের বিষয়টি খেয়াল রাখতে বলেছেন। যেমন বিল হাওর-বাঁওড় বাঁচিয়ে রাখা যায়। মামলাজটের কারণে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে সিনিয়র সচিব বলেন, মামলার কারণে প্রকল্প বিলম্ব হয়। উদ্যোগী মন্ত্রণালয় যেন প্রকল্পের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনা সচিব জানান, সিটি করপোরেশনগুলো বা স্থানীয় সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সচিব আরও জানান, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে পর্যাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট ও পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে রাস্তা এদিক-ওদিক করতে হবে। বিশেষ করে বিল, হাওর-বাঁওড় বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ, এগুলো আমাদের লাইফলাইন। এগুলো ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষা করে। বিভিন্নভাবে পানি সরবরাহ করে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ‘ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ব্যয় মেটানোর কথা ছিল। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে এ টাকা মওকুফ করে দিয়েছেন। ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে মেটানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিন প্রকল্প অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৫ হাজার ১৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা খরচে তিনটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ২ হাজার ৮৫৫ কোটি ৮ লাখ, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ও বিদেশি ঋণ ২ হাজার ২৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গতকাল সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। সচিব জানান, একনেক সভায় মোট তিনটি প্রকল্পের মধ্যে দুটি সংশোধিত ও একটি নতুন প্রকল্প। সংশোধিত দুটিই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। সেগুলো হলো ‘সোনাপুর (নোয়াখালী)-সোনাগাজী (ফেনী)-জোয়ারগঞ্জ (চট্টগ্রাম) সড়ক উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ১৭২ কোটি ৬৫ লাখ, প্রথম সংশোধনীতে হয় ১৮৫ কোটি ৯৬ লাখ এবং দ্বিতীয় সংশোধনে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ২৯৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে করা হলো ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।

আর ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ : এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পে মূল খরচ ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা, প্রথম সংশোধনীতে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেড়ে হলো ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হলো ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। নতুন প্রকল্পটি হলো স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা’। এতে খরচ হবে ৩১৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।