বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সেনাবাহিনী জনগণের পাশে ছিল : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেনাবাহিনী জনগণের পাশে ছিল : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেনাবাহিনী দেশের মানুষের বিশ্বাস ও ভরসার প্রতীক। দেশের সংবিধান এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য এ বাহিনীকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যে কোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় সদা সতর্ক থাকতে হবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই এবং তৈরি থাকতে চাই। গতকাল সকালে রাজধানীর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে শেখ হাসিনা সেনানিবাসে নবপ্রতিষ্ঠিত তিনটি ব্রিগেড ও পাঁচটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে লেবুখালীতে বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। যা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। এ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়েই আমরা বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করতে চাই। কিন্তু যদি কখনো আমরা আক্রান্ত হই, তা মোকাবিলা করার শক্তি যেন আমরা অর্জন করতে পারি, সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই। যখনই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে তখনই সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা চেয়েছি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের জীবন মান উন্নত হোক এবং সমগ্র বাংলাদেশের মানুষেরই জীবন মান উন্নত হোক। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। তিনি শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার গুরুত্বারোপ করে বলেন, আপনারা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনাদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে যাবেন। সেনাবাহিনী দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। সেভাবেই মানুষের আস্থা অর্জন করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেশাদারিত্বের কাক্সিক্ষত মান অর্জনের জন্য আপনাদের পেশগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সদর দফতর ৭ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেড (চট্টগ্রাম), সদর দফতর প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড (সিলেট), সদর দফতর ২৮ পদাতিক ব্রিগেড, ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৬৬ ইস্ট বেঙ্গল, ৪৩ বীর, ৪০ এসটি ব্যাটালিয়ন এবং ১২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেনানিবাসের জিওসিসহ ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে পায়রা নদীর তীরে দক্ষিণবঙ্গের এই একমাত্র সেনানিবাসের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জনগণের বাহিনী। এ দেশের উন্নতি হলে আমাদের সেনা সদস্যদের পরিবারেরও উন্নতি হবে। তিনি পটুয়াখালীর লেবুখালীতে ৭ম পদাতিক ডিভিশনের সদর দফতর প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে বলেন, ‘পদ্মার এপারে সশস্ত্র বাহিনীর কোনো ব্রিগেড ছিল না যে কারণে আমরা এখানে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আজ ৩টি ব্রিগেড সদর ও ৫টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমাদের সরকারের সময় সেনাবাহিনীতে অনেক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেছি। মিঠামইন এলাকায় একটি সেনানিবাস স্থাপনের কাজ চলছে। দেশের উন্নয়নে এবং যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সশস্ত্র বাহিনীর বিশাল ভূমিকার জন্য সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, এই করোনাকালে আপনারা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সেবা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছেন। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শীতকাল আসছে হয়তো করোনাভাইরাসের আরেকটা ধাক্কা আসতে পারে। তার জন্য সদা প্রস্তুত থেকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সুরক্ষিত থেকে আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ২৬ লাখ কম্বল দিল ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশন : প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ২৫ লাখ ৯৫ হাজার কম্বল অনুদান দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-বিএবি। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিএবির পক্ষ থেকে এই অনুদান গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অনুষ্ঠানে বিএবির চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুদান দেওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবিএল, উত্তরা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক প্রভৃতি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকাররা জাতির প্রয়োজনে সবসময় এগিয়ে আসেন। করোনায়ও তারা আমাদের পাশে ছিলেন। তাদের এই বদান্যতার কারণে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। এবার অনেক বৃষ্টিপাত হওয়ায় শীতের প্রকোপ বেশি হতে পারে। শীত শুরু হওয়ার আগেই বিএবি শীতবস্ত্র ও কিছু কম্বল দিতে চেয়েছে; তারা নিয়ে এসেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা এটা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারব, সহায়তা করতে পারব। করোনার সময় প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা করোনার শুরু থেকেই প্রণোদনার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে, ব্যবসায়ীদের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবিলা করার মতো মনোবল এবং সাহস বাংলাদেশের মানুষের আছে। সেই সাহসিকতা নিয়েই এ দেশের মানুষ চলে, যে কারণে এই করোনাভাইরাস থাকার পরেও আমাদের অর্থনীতির চাকাকে আমরা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। তাছাড়া, আমরা যে প্রণোদনাটা দিয়েছি তাতে সবাই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার মতো প্রণোদনা পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশের মতো প্রণোদনা দিয়েছি। সেটা ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং সাধারণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে কিছুটা হলেও মানুষ স্বস্তি ফিরে পেয়েছে।

সর্বশেষ খবর