শিরোনাম
সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প

সরকার চাচ্ছে পিপিপিতে বাস্তবায়ন করতে

নিজামুল হক বিপুল

অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। যদিও ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। সীমানাপ্রাচীরও নির্মাণ করা হয়েছে আংশিক। তবে এই প্রকল্প এখন আর সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটি বাস্তবায়ন করতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপির দিকে এগোচ্ছে সরকার। তবে সংশয় রয়ে গেছে, পিপিপিতে বিমানবন্দর নির্মাণের মতো বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

অপরদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, মোংলা পোর্টের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে তাতে খুলনায় বিমানবন্দর নির্মাণ এখন খুবই জরুরি। কারণ যশোর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে গেলে খুলনার লোকজনকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার এবং মোংলা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়কপথ অতিক্রম করে যশোর যেতে হবে। সেটি বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ যশোর সড়কটি অপেক্ষাকৃত ছোট।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খানজাহান আলী বিমানবন্দর বাস্তবায়নের জন্য সরকার ইতিমধ্যে ৫২৯ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। গত মাসেই এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ও মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকায় আংশিক সীমানাপ্রাচীরও নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকা। আর বিমানবন্দরের অধিগ্রহণকৃত এলাকাটি এখন ব্যবহার হচ্ছে গোচারণভূমি হিসেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম দিকে নিজস্ব অর্থায়নে খানাজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু এখন সেই উদ্যোগ থেকে সরকার সরে এসেছে। খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে সরকার এখন নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকার চাইছে এই প্রকল্পটি পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় প্রকল্পটি পিপিপিতে নেওয়া যায় সে জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। সবকিছু প্রস্তুত হয়ে গেলে পিপিপির জন্য আহ্বান করা হবে। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থ এখানে বিনিয়োগ করা হবে, সেই টাকা উঠিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগবে। কারণ এই বিমানবন্দরে শুধু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা হবে। সে ক্ষেত্রে দিনে হয়তো তিন থেকে চারটি ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারে। এর বেশি ফ্লাইট এখানে চলার সম্ভাবনা খুবই কম। এসব দিক বিবেচনা করে সরকার এটিকে পিপিপিতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিমান মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, পিপিপিতেও এই বিমানবন্দর নির্মাণ করা বেশ জটিল হবে। কারণ বিনিয়োগের তুলনায় আয় হবে কম। এ কারণেই বিনিয়োগকারী পাওয়া মুশকিল হতে পারে। কারণ এটি খুব ভায়াবল হবে না। তবে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিমানবন্দরটি পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা খানজাহান আলী বিমানবন্দরটি পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব পিপিপির জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিনিয়োগকারী আহ্বান করা হবে।’ প্রসঙ্গত, খুলনা শহর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লা নামক স্থানে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে মাত্র ৯৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া খানজাহান আলী বিমানবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে মাটি ভরাটসহ নানাবিধ কাজও সম্পন্ন হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনায় খানজাহান আলী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর করার ঘোষণা দেন। এরপর বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য প্রায় ৫৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সেই প্রকল্প এখন আর সামনে এগোচ্ছে না। সরকার এখন এটি নিয়ে নতুন করে ভাবছে। যদিও খুলনায় বিমানবন্দর নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ১৯৬১ সালে। তখন খুলনার মূল শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ফুলতলার মশিয়ালীতে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। ১৯৬৮ সালে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে খুলনা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতিতে স্থান নির্ধারণ এবং জমি অধিগ্রহণও করা হয়। পরবর্তী সময়ে আশির দশকে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালীতে স্থান নির্ধারণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর