সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কাল ভোট, এক মঞ্চে ওবামা-বাইডেন

তানভীর আহমেদ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কাল। রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে কঠিন ভোটযুদ্ধের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের দুই রানিংমেট মাইক পেন্স ও কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন। আগাম ভোটে কেন্দ্রে দেখা গেছে ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের ভিড়। ডাকযোগেও বেশির ভাগ বাইডেন সমর্থক ভোট পাঠিয়েছেন। এবার নির্বাচনের দিন কেন্দ্রগুলোতে ট্রাম্প সমর্থকদের বেশি দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প চাইছেন কেন্দ্রগুলোতে তার দলের সমর্থকদের ভিড়। এরই মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভোট গ্রহণের স্থানীয় সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণ ও গণনা নিয়ে পূর্বনির্দেশনা মেনে চলার অঙ্গীকার করেছেন  নির্বাচনকর্মীরা। কেন্দ্রে ও ডাকযোগে পাঠানো ভোট গণনায় এবার সময় বেশি লাগতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আগেই উদ্বেগ জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে ফলাফল পেতে দেরি হবে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রস্তুতি নিয়েছে অঙ্গরাজ্যগুলো। ভোট কেন্দ্রের বাইরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়েছে। বাড়তি পুলিশ নেমেছে বড় শহরগুলোতে। দুই দলের সমর্থকরা কাল নির্বাচনী মাঠে থাকার কথা বলেছে। সহিংসতার আশঙ্কা তাই বাড়ল। এদিকে ডাকযোগে আগাম ভোট গ্রহণ শেষ হচ্ছে আজ। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল পর্যন্ত আগাম ভোট পড়েছে ৯ কোটি ১০ লাখ। শতাব্দীর ইতিহাসে এবার সর্বোচ্চ ভোট পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটির ২০টি অঙ্গরাজ্যের দলীয় নিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ১ কোটি ৯৯ লাখ ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন। বিপরীতে ভোট দেওয়া রিপাবলিকানের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি, নির্বাচনের দিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজের ক্ষতি এড়াতে আগাম ভোটের জোয়ার বইছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প-বাইডেনের জনপ্রিয়তার কঠিন লড়াইয়ের পূর্বাভাস এটি। এদিকে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় সর্বশক্তি লাগিয়েছেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা। শেষ মুহূর্তে দুই দলের প্রার্থী মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। এই রাজ্যগুলোর ভোট নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শনিবার পেনসিলভেনিয়ায় চারটি সমাবেশে অংশ নেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ওহাইও একটি ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্য। নির্বাচনের আগে সেখানে হাজির হন ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন ‘যোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। ইভাঙ্কা বলেন, ‘আমেরিকার এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে হোয়াইট হাউসে আরও চার বছরের জন্য একজন যোদ্ধা দরকার। আমার বাবা প্রতিদিন প্রত্যেকের জন্য কঠোর লড়াই করছেন।

 এখন তার জন্য, দেশের ভবিষ্যতের জন্য লড়াইয়ের সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। ৩ নভেম্বর আপনাদের সহায়তায়, আপনাদের কণ্ঠস্বরে, আপনাদের ভোটে আমরা আরেকটি ঐতিহাসিক জয় পাব। আমরা আমেরিকাকে আগের চেয়ে আরও মহান করে তুলব।’ আজ নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভেনিয়া, উইনসকনসিন ও মিশিগানের দুটি ভেন্যুতে আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। অন্যদিকে নির্বাচনের ঠিক তিন দিন আগে একমঞ্চে দেখা গেল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং এবারের প্রার্থী জো বাইডেনকে। ভোটের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত পেনসিলভেনিয়া ও মিশিগানে শনিবার বাইডেনের প্রচারে অংশ নেন ওবামা। তাদের দুজনকে একমঞ্চে দেখা যাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ইগোকে বাস্তবতার চেয়ে বড় করে দেখাতে ভালোবাসেন। করোনায় সারা দেশ আজ বিধ্বস্ত। আমেরিকানদের মৃত্যুর মিছিল দেখেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার একগুঁয়েমিতে অটল। তিনি তার ইগোকে বড় করে দেখাতে মরিয়া। এ রকম একজন প্রেসিডেন্ট আমেরিকার জনগণ আরও চার বছর দেখতে চায় না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাইডেনকে নির্বাচিত করতে হবে। বাইডেন হবেন জনগণের প্রেসিডেন্ট, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।’ নির্বাচনী প্রচারে করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। তবে কয়েকটি রাজ্যে এই ব্যবধান খুবই সামান্য। এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হতে ব্যর্থ হলে ১৯৯২ সালের পর ট্রাম্পই হবেন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে না পারা প্রথম ব্যক্তি। এর আগে ১৯৯২ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছিল।

ট্রাম্পের সমাবেশ থেকেই করোনায় মৃত্যু ৭০০ : স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ট্রাম্পের সমাবেশ থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। আরও প্রায় ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দ্য স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এই গবেষণাটি করেছেন। ৩০ অক্টোবর গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৮টি সমাবেশ পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা এই গবেষণাটি করেছেন। যদিও ট্রাম্প শিবির থেকে সমর্থকদের সমাবেশে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার ও তাপমাত্রা পরীক্ষা করানোর কথা বলা হয়েছিল। ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু গেটস বলেন, ‘এই গবেষণা থেকেও বোঝা যায়, করোনা মহামারীকে ট্রাম্প মোটেও গুরুত্বের সঙ্গে নেননি।’ ২৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে সর্বোচ্চ ৯১ হাজার করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এক ডজনের বেশি অঙ্গরাজ্যে করোনার সংক্রমণ বাড়তে দেখা গেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শেষ রাতের পরিকল্পনা : ভোট শুরুর আগের রাতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প ও বাইডেনের রয়েছে আলাদা পরিকল্পনা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যাওয়া-আসা করবেন হোয়াইট হাউস ও নিকটবর্তী তার হোটেলের মধ্যে। ওয়াশিংটন ডিসিতে তার সমর্থকদের উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটন নগরীর চেইজ সেন্টার থেকে বক্তব্য দেবেন। করোনা সতর্কতার কারণে চেইজ সেন্টারের সমাবেশ খুবই সীমিত হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায়, মাস্ক পরাসহ উপস্থিত লোকজনের জন্য পিপিই বাধ্যতামূলক করা হবে। এদিকে ভোটের রাতে ট্রাম্প হোটেলে, নাকি হোয়াইট হাউসে থাকবেন- তা নিয়ে রিপাবলিকান শিবির থেকে কোনো নিশ্চিত ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর