শিরোনাম
সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পায়েল হত্যা

হানিফ পরিবহনের চালকসহ তিনজনের মৃত্যুদন্ড

আদালত প্রতিবেদক

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় হানিফ পরিবহনের বাসচালকসহ তিনজনের মৃতুদন্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন- হানিফ পরিবহনের বাসচালক জামাল হোসেন, চালকের সহকারী ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজার মো. জনি। তাদের মধ্যে জামাল ও ফয়সাল সহোদর। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, এই মামলাটির বিচার কাজ প্রথমে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুরু হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ মামলাটি চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে। কিন্তু আসামিপক্ষের আবেদনে হাই কোর্টের আদেশে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানো হয়। পরে গত বছরের ২ এপ্রিল এই হত্যা মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৪ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। গতকাল রায় ঘোষণার পর নিহত পায়েলের মামা মামলার বাদী গোলাম সরোয়ার্দী বিপ্লব আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার রায় পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাইদুর রহমান পায়েলের বাসা চট্টগ্রামের হালিশহর সিডিএ আবাসিক এলাকায়। ২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনের সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন সাইদুর। দুই দিন পর ২৩ জুলাই মুন্সীগঞ্জের ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা-পুলিশ। এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সাইদুরের মামা গোলাম সরোয়ার্দী বাদী হয়ে চালক জামাল হোসেন, তার সহকারী ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজার জনিকে আসামি করে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে বলা হয়, গজারিয়া এলাকায় গাড়ি যানজটে পড়ায় প্রস্রাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন সাইদুর। বাস চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে গিয়ে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে সংজ্ঞা হারান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে দায় এড়াতে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে যান আসামিরা। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, অদক্ষ গাড়িচালক, বেপরোয়াভাবে বাস চালানো, গাড়ি চলাচলের অযোগ্য রাস্তা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে এই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সড়কে প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, নাকি হত্যা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বসাধারণের মনে। রায়ে বলা হয়, প্রতিটি সড়ক যেন হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ। সড়ক দুর্ঘটনা তো ঘটছেই, মারা যাচ্ছে সব বয়সী মানুষ। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীও রেহাই পাচ্ছে না বেপরোয়া বাসচালকদের হাতে। সড়ক যোগাযোগমাধ্যম এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দিনে দিনে সড়কে দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কোনোভাবেই এই মৃত্যুর মিছিল থামছে না। সাম্প্রতিক আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আদালত বলেছেন, তাহলে আর কবে আমরা সজাগ হব। নিহত ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল মেধাবী ছাত্র ছিলেন। উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের জন্য যখন নিজেকে তিনি প্রস্তুত করেছিলেন, সেই মুহূর্তে বাসচালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহকারীর নির্মমতার শিকার হয়ে তাঁকে অকালেই প্রাণ দিতে হলো। সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আদালত চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। প্রথমত, গাড়ি চালাতে দেওয়ার আগে চালক, সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারী মাদক গ্রহণ করেছেন কি না, সে জন্য তাদের প্রত্যেককেই ডোপ টেস্ট করাতে হবে। দ্বিতীয়ত, গাড়ির চালক, সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারীরা প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে কর্কশ ও অভদ্র আচরণ করেন। গাড়ির চালক সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারী অবশ্যই যাত্রীদের সঙ্গে নম্র ও ভদ্র আচরণ করতে হবে। চালকসহ অন্যদের গাড়ি চালানোর বিষয় এবং যাত্রীদের সঙ্গে আচরণসংক্রান্ত কাউন্সেলিং বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, মহাসড়কের প্রতি তিন কিলোমিটার পরপর গাড়ির চালক, চালকের সহকারী এবং সুপারভাইজার এবং যাত্রী সাধারণের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আধুনিক বাথরুম স্থাপন করতে হবে। এ জন্য বাসমালিকদের সরকারের সড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের নির্ধারিত হারে মাসিক চাঁদা প্রদান করতে হবে। চতুর্থত, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) মাধ্যমে মহাসড়কে যান চলাচলের ওপর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর