সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পিঁয়াজ-আলু নিয়ে দুই মন্ত্রীর বৈঠক

দুই সচিবের নেতৃত্বে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে ত্বরিত সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, মজুদ, বিপণন ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য ও কৃষি এই দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর মধ্যে গতকাল সকালে সচিবালয়ে দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে, যেখানে আগামী ৩ বছরের মধ্যে পিঁয়াজের উৎপাদন আরও ১০ লাখ মেট্রিক টন বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পিঁয়াজ-আলুসহ কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি এসব পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে দুই সচিবের নেতৃত্বে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এই গ্রুপ পিঁয়াজ-আলুসহ কৃষিপণ্যের যে কোনো সংকটে ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার রাখবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ছাড়াও দুই মন্ত্রণালয়ের  সচিব এবং অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পিঁয়াজ, আলু, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করে। ফলে কোনো পণ্যের সংকট সৃষ্টি হলে সমন্বয়হীনতার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতা তৈরি হয়। দুই সচিবের নেতৃত্বে যে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হলো সেটি কৃষিপণ্যের উৎপাদন, বিপণন, মূল্য পরিস্থিতি নিয়মিত মনিটরিং করবে। কোনো ধরনের সংকট সৃষ্টি হলে সমন্বয়ের মাধ্যমে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেবে।

সচিব জানান, এই ওয়ার্কিং গ্রুপে সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, টিসিবি, প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।

আরও যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে : বৈঠকে অংশ নেওয়া সূত্রগুলো জানায়, দুই মন্ত্রীর বৈঠকে পিঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিশেষ ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বলা হয়, পিঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলাজাতীয় পণ্যে ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণের সুযোগ থাকলেও কৃষকরা এ ঋণ সুবিধা পান না। পণ্যটির উৎপাদন বাড়াতে প্রতি বছর আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া বারি-৫ জাতের গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, আগামী ৩ বছরে দেশে পিঁয়াজের উৎপাদন ১০ লাখ টন বাড়ানো হবে। সে জন্য গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্য অর্জনে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।

ইআরএফ অ্যাওয়ার্ডে বাণিজ্যমন্ত্রী : রাজধানীর পুরানা পল্ট?নে অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২০ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের সহযোগিতায় পিঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৫৫ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, গত বছরের পিঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল ওই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার আগে থেকেই আমরা প্রস্তুত ছিলাম। সংকট সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যটি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিন দিন আগে থেকে দেশে পিঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী : মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, পিঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য উচ্চফলনশীল বারি-৫ জাতের পিঁয়াজের চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি মেহেরপুরের কালিগাংনী গ্রামে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বারি-৫ জাতের পিঁয়াজ পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, এই জাতের পিঁয়াজ প্রতি হেক্টরে ১৯ মেট্রিক টন পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর