বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আমেরিকাজুড়ে নিরাপত্তা আতঙ্ক

ঘরবাড়ি দোকানপাটের নিরাপত্তায় আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছেন মালিকরা, সতর্কতায় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমেরিকাজুড়ে নিরাপত্তা আতঙ্ক

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন নিরাপত্তা দেবে প্রশাসন। নির্বাচনের দিন ও পরবর্তী সম্ভাব্য সব ধরনের সংঘাত ঠেকাতে প্রস্তুতি নিয়েছে দেশটির পুলিশ বিভাগ। কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন মার্কিনিরা। মূলত নির্বাচনের ফল এবং নির্বাচন-পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ফ্লোরিডা, শিকাগো, ওহাইও, ম্যাসাচুসেটস, মিশিগান, ওয়াশিংটন ডিসিসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়েছেন রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা। এ অবস্থায় এক অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ভোট টানতে ট্রাম্পের সশস্ত্র উগ্র সমর্থক গোষ্ঠী ‘প্রাউড বয়েজ’ ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। গোলমাল করতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বাইডেনের সমর্থকরাও। ফলে নিজেদের ঘরবাড়ি দোকানপাটের নিরাপত্তায় আলাদা ব্যবস্থা নিয়ে রাখছেন উল্লেখ সংখ্যক মালিকরা।

এএফপি জানিয়েছে, রাজধানী ওয়াশিংটনের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে হোয়াইট হাউস ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে সহিংসতা ও ভাঙচুর থেকে নিজেদের সম্পদ সুরক্ষার জন্য দিনরাত কাজ করছেন ব্যবসায়ীরা। ভোটের দিন ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে রাস্তার ধারের দোকানপাট ও ভবনগুলোর জানালা-দরজায় এবং দেয়ালে দোকানিদের কাঠ ও বোর্ড লাগাতে দেখা গেছে।

গণমাধ্যমগুলো বলছে, হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইয়ে দুই পক্ষের সমর্থকরা ইতিমধ্যে আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের দেয়ালে দেয়ালে বিভিন্ন পোস্টার ছেপে দিয়েছেন অনেকে। এখন দেশজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংঘাতের আশঙ্কায় ম্যাসাচুসেটস রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ডের ১ হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে প্রশাসন। শুধু ম্যাসাচুসেটস নয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্পর্শকাতর রাজগুলোতে বিপুল নিরাপত্তা সদস্য বাড়ানো হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির বরুকিংস ইনস্টিটিউশনের সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল বাইম্যান সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, আমরা জানি না কী হতে যাচ্ছে এই নির্বাচনে। যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। বিপদের আভাস পাচ্ছি। লাস ভেগাস মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-প্রধান অ্যান্ড্রু ওয়ালশের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আধুনিক সময়ে এমন কিছু আমরা দেখেছি বলে মনে হয় না।

ইউএস টুডে এবং সাফোক ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে এই সমীক্ষা পরিচালনা করেছে। তাতে দেখা যায়- যুক্তরাষ্ট্রের এক-চতুর্থাংশ ভোটার হিংসার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। সমীক্ষার ফলাফলে বলা হয়েছে- চূড়ান্ত বিজয়ীকে নির্বাচন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কেউ কেউ সামরিক ক্যুর আশঙ্কা করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাইডেনের কাছে যদি সামান্য ব্যবধানে হেরে যান তবে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর মধ্যেই পরিকল্পিত মহড়া এবং আগাম ভোট কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়া যদি দ্রুত ভোটের ফল জানা না যায় বা ফলাফল নিয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয় তাহলে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছরের প্রস্তুতিতে অস্বাভাবিক তীব্রতা যোগ করতে হচ্ছে। কারণ দেশজুড়ে তীব্র উত্তেজনা, ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ছাড়া আমেরিকার আধুনিক ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো নির্বাচনের ফল নিয়ে সংঘাত বাধার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই প্রায় ১০ কোটি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। এই আগাম ভোটের প্রক্রিয়ায় উত্তেজনা তৈরি ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ এসেছে অনেক। এগুলো মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাস্তবায়ন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা নির্বাচনকেন্দ্রিক সময়কে তিনটি স্বতন্ত্র ভাগে ভাগ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। লাস ভেগাস মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-প্রধান অ্যান্ড্রু ওয়ালশ জানিয়েছেন, প্রথমত, আগাম ভোটের সময়কাল। এ সময় প্রচুর মানুষের সমাগম হচ্ছে এবং বিভক্তি ও কোন্দলের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় হচ্ছে নির্বাচনের দিন। ওই দিনই সবচেয়ে বেশি ভিড় ও জমায়েত হবে। এই সুযোগে যাতে কোনো ধরনের ঝামেলা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে আসছে সবচেয়ে অনিশ্চয়তার সময়। আর তা হচ্ছে যদি নির্বাচনের ফলাফল বের হতে দেরি হয়। ওয়ালশ বলেন, আমরা জানি না এটি কত সময় নেবে বা কেমন হবে। পরিস্থিতি কেটে যাওয়া পর্যন্ত অস্থিরতার মধ্যে থাকতে হবে। তিনি বলেন, এবারের অবস্থা হচ্ছে এমন যে, যিনিই জয়ী হোন না কেন, কিছু মানুষ খুশি হবে না। শিকাগোর পুলিশ সুপার ডেভিড ব্রাউন বলেন, ‘সিটি কর্মকর্তারা তিনটি কর্মপরিকল্পনা করেছেন এবং আরও একটি পরিকল্পনা করতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের দিন যেমন পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন, আমরা যাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে মোকাবিলা করতে পারি। অন্য শহরগুলোও একই পরিকল্পনা নিচ্ছে। কী ঘটতে যাচ্ছে আমরা জানি না। দেশজুড়ে আমাদের সহকর্মীদের কাছ থেকে আমরা পরামর্শ নিচ্ছি যে, আমরা কী প্রত্যাশা করতে পারি।’

ট্রাম্পের ক্ষমতা ছাড়া না ছাড়া নিয়েও জল্পনা-কল্পনা : নির্বাচনে হেরে গেলে ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়বেন কিনা তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। হয়েছে জরিপ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই মনে করছেন, নির্বাচনের পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে যা সংঘর্ষেও রূপ নিতে পারে। চারজনের মধ্যে মাত্র একজন বলেছেন, নির্বাচনের পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। এসব জল্পনা-কল্পনার কারণ নির্বাচনে হেরে গেলে সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা ছাড়বেন কিনা, এ বিষয়ে উত্তর দিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্বীকার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কয়েকবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বলেছেন, তিনি নির্বাচনে হেরে গেলে ক্ষমতা ছাড়বেন না। এরপর থেকেই সন্দেহ সৃষ্টি হয় হোয়াইট হাউস ছাড়ার বিষয়ে। তবে রিপাবলিকান প্রার্থী বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতা না ছাড়লে সেনাবাহিনী তাকে সরিয়ে দেবে। যদিও সংবিধান তাই বলছে। কিন্তু ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ট্রাম্প আগেভাগে নিজেই সেনাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিতে পারেন। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে ঠেলে দেবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর