বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
সংবিধান প্রণয়ন দিবস আজ

থমকে আছে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ শুনানি

আরাফাত মুন্না

আজ ৪ নভেম্বর। ৪৯তম সংবিধান প্রণয়ন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকে সংবিধান কার্যকর হয়। এ পর্যন্ত সংবিধানে ১৬টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এদিকে সংবিধানের সর্বশেষ (ষোড়শ) সংশোধনী সর্বোচ্চ আদালত থেকে অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ আবেদনের শুনানি থমকে আছে। আর আইনি জটিলতা সমাধান না হওয়ায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ এ দলিলটি ছাপা বন্ধ রয়েছে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের  হাতে পুনর্বহাল-সংক্রান্ত ওই সংশোধনী বাতিলের রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কবে এই রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে, এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আবেদনটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শুনানির জন্য প্রস্তুত রেখেছি। তবে করোনার কারণে আপিল বিভাগে কোনো রিভিউ আবেদনের শুনানি হচ্ছে না। আশা করছি, রিভিউ শুনানি শুরু হলেই ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ আবেদনটি প্রথম দিকেই থাকবে। এর আগে করোনাকালের সংকট কেটে গেলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ পিটিশনের শুনানি শুরু হবে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেসে (বিজি প্রেস) বাংলা ও ইংরেজিতে ছোট-বড় তিন হাজার কপি সংবিধান ছাপা হয়। এরপর আর ছাপা হয়নি। আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উচ্চ আদালতে ষোড়শ সংশোধনীর রায়-সংক্রান্ত রিভিউ আবেদন বিচারাধীন থাকায় নতুন করে সংবিধান ছাপা সম্ভব হচ্ছে না। রিভিউর রায় দেখে সংবিধান ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই কর্মকর্তা আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাই জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীসহ সংবিধান ছাপানো হলে আদালত অবমাননা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইভাবে ষোড়শ সংশোধনী ছাড়া সংবিধান ছাপানো হলে সংসদ থেকে শোকজ নোটিস পাঠানো হতে পারে। তাই সরকার আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। এ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট করেন। ২০১৬ সালের ৫ মে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী বলে রায় ঘোষণা করে। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে। পরে ১ আগস্ট এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এ রায়ে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, সংসদসহ বিভিন্ন ইস্যুতেও মন্তব্য করে আপিল বিভাগ।

পরে একই বছর ২৪ ডিসেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০৮ পৃষ্ঠার এই রিভিউ আবেদন জমা দেওয়া হয়। আবেদনে রায় রিভিউর জন্য রাষ্ট্রপক্ষে ৯৪টি সুনির্দিষ্ট যুক্তি তুলে ধরে। পাশাপাশি আপিল বিভাগের দেওয়া পুরো রায় বাতিল চাওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর