বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মার্কিন ভোটে ফ্যাক্টর করোনাভাইরাস

মাহমুদ আজহার

মার্কিন ভোটে ফ্যাক্টর করোনাভাইরাস

শমসের মবিন চৌধুরী

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটে করোনাভাইরাস ফ্যাক্টর হবে। এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই ভোট হচ্ছে। ১৫ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। এরই মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যাও আরও বিশাল। এ বিষয়টি এখন সামনে এসেছে। ভোটের মাঠে এটা বড় ফ্যাক্টর হবে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এ বিষয়টিকে সামনে তুলে  ধরেছে। ট্রাম্প সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টি তাদের প্রচারে গুরুত্ব পায়।

গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে এসব কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। আলাপচারিতায় বিএনপির সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, করোনা ইস্যুতে দুর্বল অবস্থানে আছেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটরা অভিযোগ করছেন, ট্রাম্প কোনো বিজ্ঞানের কথা মানছেন না। কোনো চিকিৎসকের কথা শুনছেন না। দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা না করে শুধু নিজেরটাই ভাবছেন। তবে উগ্রবাদী শ্বেতাঙ্গ যুব গোষ্ঠীর সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। সেই গোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করেই চার বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, কে বিজয়ী হবেন- এ মুহূর্তে এটা বলা মুশকিল। তবে ভোটারদের ৭৪ শতাংশই ডাকযোগে আগাম ভোট প্রয়োগ করেছে। এত আগাম ভোট অতীতে কখনো হয়নি। এসব ভোটে জো বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। তবে আগাম ভোটের চূড়ান্ত গণনা করতে সময় লাগবে। একেক রাজ্যে একেক ধরনের ভোট পদ্ধতি। এ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্থির আছেন। এ নিয়ে তিনি আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ভোট কারচুপির কথাও বলছেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগে বলছেন, পোস্টাল ব্যালটে কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আগামভাবে কারচুপি হওয়ার আশঙ্কা করার মানে হলো, তিনি আগাম ভোট নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। তবে শেষ পর্যন্ত ইলেকট্রোরাল কলেজের ফলাফলে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়।

মার্কিন নির্বাচনে ভোটের আগে বিভিন্ন জরিপ প্রসঙ্গে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, জরিপ যারা করেন, তারা অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মতভাবেই করে থাকেন। তবে অতীতে জনমত জরিপ যতটা সঠিক হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে, আবার ভুল হওয়ার দৃষ্টান্তও আছে। বিগত ভোটের আগে ২০১৫ সালে বিভিন্ন জরিপে বলা হয়েছিল, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে। পরে দেখা গেল রক্ষণশীলরা শুধু নিরঙ্কুশ নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হন। ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট হবে না। সেখানেও জরিপ ভুল প্রমাণিত হয়। ২০১৬ সালে জরিপে বলা হয়, হিলারি কিøনটন বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। তবে এবারের জরিপ একটু ব্যতিক্রম। কারণ, ২০১৬ সালের নির্বাচনে কেউ আশাই করেননি, ট্রাম্পের মতো ব্যক্তি এত ভোট পাবেন। এ জন্য জরিপগুলোও ওই সময় এত বিস্তরভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এবারের জরিপকারকরা দাবি করছেন, তারা অনেক ভেবেচিন্তে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে জরিপ করছেন। আমি কোনো জরিপকেই উড়িয়ে দিচ্ছি না।

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি, জো বাইডেন এবার পপুলার ও ইলেকট্রোরাল কলেজ ভোটে বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হবেন। নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া সব সময় ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোট দেয়। এ ছাড়া ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, পেনসিলভেনিয়ায় আমার মনে হয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই ভোট পড়বে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি। কী ধারায় ফলাফল যাচ্ছে, তা বুঝতে ১৮-২০ ঘণ্টা সময় লাগবে।

বাংলাদেশ বা অভিবাসীদের জন্য কার জয় গুরুত্বপূর্ণ- এমন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ইসু্যুতে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নীতির তেমন কোনো পার্থক্য নেই। অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের বিরোধিতা অনেক শক্তিশালী। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এ ব্যাপারে অনেকটাই শিথিল। এক্ষেত্রে বাইডেন বিজয়ী হলে যাচাই করবেন, অভিবাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে। যদি দেখেন, শ্বেতাঙ্গ বা মার্কিন নাগরিকরা অভিবাসননীতি নিয়ে খুব কট্টর অবস্থানে, তাহলে ট্রাম্পের নীতি থেকে খুব একটা সরে আসবেন না বাইডেন।

তিনি বলেন, এটা ঠিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ঐতিহাসিকভাবেই অভিবাসনের পক্ষে। তাদের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বাবা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ও মা ভারতীয়। এ জন্য ডেমোক্র্যাটরা বিজয়ী হলে অভিবাসন নিয়ে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমি মনে করি, জো বাইডেন বিজয়ী হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস অন্যদের তুলনামূলক বেশি ভূমিকা পালন করবেন। কারণ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিনেটর। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাও সর্বস্বীকৃত। তিনি স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বাইডেনের বয়স ৭৮। সেখানে বাইডেন জয়ী হলে কমলা ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর