বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

শেষ মুহূর্তে শুধুই নাটকীয়তা

ভোট শেষে মধ্যরাতে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, টানটান উত্তেজনা, তিন অঙ্গরাজ্যের ভোটে সব হবে চূড়ান্ত

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

শেষ মুহূর্তে শুধুই নাটকীয়তা

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা নাটকীয়তা। একদিকে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, অন্যদিকে চলছে ঘোষণা পাল্টা ঘোষণা। ট্রাম্প-বাইডেন দুই পক্ষ থেকেই জয়ী হওয়ার জোরালো ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ভোট গণনার শেষ দিকে এসে পরিস্থিতিও এমন দাঁড়িয়েছে, যে কেউ জিতে যেতে পারেন নির্বাচনে। সেজন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। তবে নাটকীয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা। কারণ ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে চলমান ভোট গণনার প্রক্রিয়া। তৈরি হবে এক নতুন পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তৈরি করেছে টানটান উত্তেজনা।

বাংলাদেশ সময় গত রাত ১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ভোট গণনা শেষ হয়নি কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে। এর মধ্যে ২৩৮ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে ২১৩ ভোট নিয়ে পিছিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষ না হওয়া উইসকনসিন, মিশিগান, নেভাদায় এগিয়ে আছেন বাইডেন। ক্ষমতা গঠনের জন্য তার প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট এসব রাজ্য থেকেই চলে আসতে পারে। তবে লড়াই হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি। জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভেনিয়া, আলাস্কায় এগিয়ে থাকা ট্রাম্প জিতলেও প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাবেন না। ফলে নেভাদা, মিশিগান ও উইসকনসিনে ট্রাম্পকে চমক দেখাতে হবে। এর আগে, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফোন, টেক্সট, ই-মেইলে ভয়ভীতির কারণে অনেক ভোটার কেন্দ্রে যাননি। এ জন্য আগাম ভোট ও পোস্টাল ভোটের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার কেন্দ্রে যে ধরনের ভিড় হবে বলে আশা করা হয়েছিল, সেটি খুব কম ক্ষেত্রেই ঘটেছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়, এফবিআই, স্টেট ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, ‘ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন’-এমন হুমকি দিয়ে মঙ্গলবার ৮ লাখ ভোটারের কাছে ৩০ লাখ কল করা হয়। মিশিগান, ভার্জিনিয়া, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, ক্যানসাস, ওহাইয়ো, ওয়াশিংটন, জর্জিয়া, নিউইয়র্ক, নিউ হ্যাম্পশায়ার, পেনসিলভেনিয়া প্রভৃতি স্টেটে এমন কল করার নথি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে। ফেসবুক, টুইটার কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে এসব কলের উদ্যোক্তাগণের হদিস। তবে ল’ইয়ার কমিটি ফর সিভিল রাইটস আন্ডার ল’র প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন ক্লার্ক মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ফোন, টেক্সে, ম্যাসেঞ্জারে এ ধরনের হুমকিদাতারা সংঘবদ্ধভাবেই কাজটি করেছেন বিশেষ মহলের স্বার্থে। এমনকি কয়েকটি স্টেটে ভোটারকে জানানো হয়, মঙ্গলবারের পরিবর্তে বুধবার অনুষ্ঠিত হবে সশরীরে ভোট গ্রহণের কাজ। করোনার কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনের সময় এমন হুমকি-ধমকির ফোনকল এসে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, কাজটি বিদেশ থেকে করা হয়েছে। বিদেশের কোনো সরকার নেপথ্যে রয়েছে কিনা তাও এখন পর্যন্ত উদঘাটিত হয়নি। ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক জেনারেল পোল এম নাকাসোনে বলেছেন, অপরাধ চক্রের হদিস উদঘাটনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এফবিআই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলেও মনে করছেন এই জেনারেল। গত কয়েক দিনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার কিছু সমর্থকের কথাবার্তা, মন্তব্য ইত্যাদির কারণে আমেরিকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল যে, ভোটের দিন ব্যাপক হাঙ্গামা হতে পারে। বড় বড় স্টোরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা যথাযথ পদক্ষেপও গ্রহণ করেন বিপুল অর্থ ব্যয়ে। প্রধান সিটিগুলোতে টহল পুলিশের বৃদ্ধির পাশাপাশি ন্যাশনাল গার্ডও স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়। টানটান উত্তেজনার মধ্যে পুরো দিন অতিবাহিত হওয়ায় সবাই স্বস্তিবোধ করছেন।

ভোটের ময়দানে সরব প্রবাসীরাও : প্রবাসীরাও এবার ব্যাপক হারে ভোটে অংশ নিলেন। নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, ভার্জিনিয়া, টেক্সাসের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার কেন্দ্রগুলোতে (আর্লি এবং মঙ্গলবার) বাংলাদেশিদের উপস্থিতি ছিল আশাব্যঞ্জক। আগে কখনো এমন উৎসব-উল্লাস দেখা যায়নি জাতীয় নির্বাচন ঘিরে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, গত চার বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনিয়ম আর অপশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ। পুনরায় ট্রাম্প জয়ী হলে মুসলিম ব্যানের পরিধি প্রসারিত হবে এবং অভিবাসনকে সংকুচিত করার হুমকি রয়েছে। এমন পরিস্থিতির অবসান চান বলেই সবাই বাইডেনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। ব্যালট বিপ্লব ঘটিয়ে অ-আমেরিকান মনোভাবাপন্ন প্রশাসককে হোয়াইট হাউস থেকে অপসারণ করার সংকল্প থেকেই বাংলাদেশিসহ অভিবাসীরা ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন।

কমিউনিটি সূত্রে জানা গেছে, সিটিজেনশিপ গ্রহণকারীর ৮৫% এর অধিক ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগেই। তবে বিগত নির্বাচনে এর অর্ধেকও কেন্দ্রে যাননি, ভোট দেওয়া তো দূরের কথা। করোনার কারণে এবার অনেকেই বেকার হয়ে ঘরে থাকার জন্য ভোটে আগ্রহ বেড়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তবে পারিবারিক কোটায় আত্মীয়স্বজনকে যুক্তরাষ্ট্রে আনার কার্যক্রমে কঠোরতা অবলম্বনের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প হটানোর মনোভাব তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। সে তাগিদেই বাইডেন-কমলা হ্যারিসকে ভোট দেন প্রবাসীদের প্রায় সবাই। ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, নিউজার্সি, টেক্সাস, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, ডাকযোগে এবং আগাম ভোট কেন্দ্রেও অসংখ্য প্রবাসী সরব ছিলেন। বাংলাদেশি অধ্যুষিত কেন্দ্রসমূহে বাংলা সাইনের পাশাপাশি ব্যালটেও বাংলা সংযোজন করা হয়। অনেক কেন্দ্রে বাঙালি অনুবাদক ছিলেন। ফলে কারও কোনো সমস্যা হয়েছে বলে জানা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবাই কেন্দ্রে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যচিত্তে ভোট দিয়েছেন। সামনের বছর যারা সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে অবতীর্ণ হতে চান, তারাও বেশ সোচ্চার ছিলেন বিভিন্ন কেন্দ্রে। এভাবেই মার্কিন ধারায় বাঙালিদের সম্পৃক্ততার প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর