বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই দশকে এত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন দেখিনি

ড. আলী রীয়াজ

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

দুই দশকে এত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন দেখিনি

গত দুই দশকের মধ্যে এত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তার মতে, বিপুলসংখ্যক মানুষ এবার ভোট প্রদানের কারণ তিনটি। প্রথম, করোনাভাইরাসের কারণে অনেকে আগেই ভোট দিয়েছেন। মেইলিং ভোট এবং আগাম ভোটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যদেরকে প্রভাবিত করেছে। দ্বিতীয়ত, এই নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। আমিও মনে করছি, গত দুই দশকের মধ্যে এত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন দেখিনি। ২০১৬ সালে যারা ভোট দেননি, এবার তারা দিয়েছেন। এ জন্যই গত নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটারের উপস্থিতি বেড়েছে। তৃতীয়ত, এদেশের মানুষ একটা পরিবর্তন চাচ্ছে। মানুষ পরিবর্তন চাইলেই ভোটের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছিল। কারণ, বারাক ওবামা প্রার্থী ছিলেন। সবাই ভেবেছিলেন একটি পরিবর্তন আসবে। এবারের অবস্থা দৃষ্টে আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, এই বিপুলসংখ্যক ভোটার কোনো না কোনোভাবে পরিবর্তন চান। এটা তো সবাই বুঝি যে, স্থিতাবস্থা অটুট রাখতে সচরাচর কেউই ভোট দিতে যান না।

পরিবর্তনের জন্য আমেরিকানরা কেন এতটা উদগ্রিব এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আলী রীয়াজ বলেন, যে সংকটের মধ্যে দেশ আছে, এর থেকে উত্তরণে একটি পথ সবাই খুঁজতে চান। এমনকি ট্রাম্পের সমর্থকরাও আরও বেশি সমর্থন দিচ্ছেন এবং তারা ভাবছেন যে, তাহলেই করোনাভাইরাস এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির, এই অবস্থা তিনি বদলাতে পারবেন। তারা মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, শ্বেতাঙ্গরা অনেক বেশি সুবিধা পাচ্ছে, এসবের পরিবর্তন হওয়া দরকার। এটা ট্রাম্প সমর্থকদের প্রত্যাশা। অন্যদিকে যারা বাইডেনের সমর্থক এবং আমি মনে করি যারা সরাসরি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি না করলেও ইন্ডিপেনডেন্টদের মধ্যেও এমন চিন্তাটি আছে যে দেশের ডিরেকশনটি ঠিক হচ্ছে না। করোনাভাইরাসে এতলোক মরেছে। অর্থনীতিতে স্থবিরতা এসেছে। দেশে সামাজিক ন্যায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন, বর্ণবাদ নিয়ে প্রশ্ন, বর্ণ-বৈষম্য-এমন অবস্থার অবসান ঘটতে হবে, এ জন্যে অনেকদূর যেতে হবে আমাদের। এসব বদলানোর জন্যেই তারা মনে করেন যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন এসে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারবেন। এবং বাইডেন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন জায়গা থেকে বের করতে পারবেন। ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবেন। বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারসাধনে সক্ষম হবেন। মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের এমন আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ ঘটে আগাম ভোটে ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। মঙ্গলবারের নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছিল বিভিন্ন মহল থেকে। প্রকৃত অর্থে সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।

বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে-এটি বিবেচনায় রাখতে হবে। এবং যুক্তরাষ্ট্রের যে পররাষ্ট্রনীতি, তার ওপর ভিত্তি করেই এই সম্পর্ক তৈরি হয়। কে ক্ষমতায় আছেন সেটি গুরুত্ব পায় না রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। তাই বাইডেন যদি ক্ষমতায় আসেন, তাহলে আমরা অনুমান করতে পারি যে, তার কিছু কথাবার্তা এবং তার পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন ঘটবে। কেননা ট্রাম্প প্রশাসন গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে ফেলেছে। এবং যেভাবে এক ধরনের ইউনিলেটারাল পলিসি অনুসরণ করেছে, সেগুলোর পরিবর্তন করতে হবে। এবং বাইডেন সেগুলো করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভোটের ময়দানে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং একই বিবেচনায় এশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটবে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণে ট্রাম্প প্রশাসন যেসব বিষয়কে গুরুত্ব দেননি, সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে আমি মনে করি। এর অন্যতম হচ্ছে মানবাধিকারের প্রশ্ন, গণতন্ত্রের প্রশ্ন, ওইসব দেশে সামগ্রিকভাবে অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা আছে কিনা, তা গুরুত্ব পাবে। ওইসবের আলোকেই সম্পর্ক তৈরি হবে। ইতিবাচক, নেতিবাচক, কোন সরকার, কার নেতৃত্ব-এগুলো বিবেচনা না করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্পর্ক অটুট থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাণিজ্যিক, অর্থনীতিক। কারণ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণের পণ্য রপ্তানি করে সেই ব্যালেন্স কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে-এটি মনে রাখতে হবে। বিভিন্ন কূটনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং তা করতে হবে। পারিস অ্যাকোর্ড থেকে ট্রাম্প বেরিয়ে আসায় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে। বাইডেন প্রশাসন এলে সেখানে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্র নেবে এবং বাংলাদেশ তার বাণিজ্যিক স্বার্থ সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করবে। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের কাঠামো চালু হয়েছে, সেগুলো অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সম্পর্ক অটুট রাখতে উভয় দেশেরই স্বার্থ রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় কোনো বলিষ্ঠতা আসবে বলে কি মনে করেন? জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, আমি আশা করছি যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। এই কারণে করবে বলে আমি মনে করছি যে, রোহিঙ্গা প্রশ্নটাকে বৈশ্বিক রাজনৈতিক বিবেচনায় দেখতে হবে, আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিবেচনায়ও রাখতে হবে। যেহেতু মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা আছে এবং এ ব্যাপারটির সমাধানে চীন কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে মাইক পম্পেও ক্ষোভের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। তাই প্রশাসনে পম্পেও না থাকলেও বাইডেন প্রশাসন তা করতে কালক্ষেপণ করবেন না। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি মনোযোগী হবে বলেই মনে করছি।

সর্বশেষ খবর