শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
নৌবাহিনীর পাঁচ জাহাজের কমিশনিং

সমুদ্রসম্পদ আহরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সমুদ্রসম্পদ আহরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী

সমুদ্রসম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সব সময় চেয়েছি আমাদের এ সমুদ্রসীমা শুধু রক্ষা করা নয়, সমুদ্রের সম্পদটাও যেন আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে লাগে। এ ক্ষেত্রে আমরা ব্লু ইকোনমির ধারণা নিয়েছি এবং তার ওপর কাজ করে যাচ্ছি। এ সমুদ্রের যে সম্পদ আমাদের রয়েছে সে সম্পদ আহরণের লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা ওমর ফারুক’, ‘আবু উবাইদাহ’, ‘প্রত্যাশা’, ‘দর্শক’ ও ‘তল্লাশি’র কমিশনিং প্রদানকালে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সমুদ্রসীমা রক্ষার পাশাপাশি সমুদ্রসম্পদ আহরণের মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সমুদ্রসম্পদ অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। আমাদের সে সুযোগও রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সমুদ্রসীমা ও সম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনীর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা থেকে শুরু করে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তাবিধান করে যাচ্ছেন। এটা প্রশংসার দাবি রাখে। করোনাভাইরাসের সময় আমাদের নৌবাহিনী যথাযথ ভূমিকা রেখেছে। যে কোনো প্রাকতিক দুর্যোগেও তারা মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং যথাযথ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, শুধু নৌবাহিনী বলে নয়, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সবাই অনেক ভালো কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে শক্তিশালী আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যদি বাংলাদেশ কখনো বহিঃশত্রুর আক্রমণ দ্বারা আক্রান্ত হয় তা মোকাবিলা করবার মতো সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে চাই। তাই আমরা সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীকে আধুনিক, দক্ষ, শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা বাস্তবমুখী পরিকল্পনা নিই। আমরা নৌবাহিনীতে বর্তমান প্রজন্মের উন্নত সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্র্যাফট, হেলিকপ্টারসহ আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজন করেছি। এর মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। আজ যে জাহাজগুলো কমিশনিং হলো সেগুলো আমাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে। নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। তিনি বলেন, আজ আমরা পাঁচটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ নৌবাহিনীতে সংযোজন করতে সক্ষম হলাম। আপনারা জানেন, গণচীনের তৈরি আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত দুটি ফ্রিগেড ও একটি অত্যাধুনিক করভেট এবং আমাদের নিজস্ব খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি দুটি আধুনিক জরিপ জাহাজ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীর ক্ষমতাকে আরও জোরদার করবে। নিজ দেশে জাহাজ নির্মাণ সক্ষমতার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব ইয়ার্ডে জাহাজ তৈরির সক্ষমতা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বলীয়ান করে। আমরা হয়তো ভবিষ্যতে অন্য দেশের জন্যও জাহাজ তৈরি করতে পারব। সে সক্ষমতা আমরা অর্জন করব। সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শীতকাল আসছে। আবার করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। ইউরোপে ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় লকডাউন হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষকে আমরা সুরক্ষিত রাখতে চাই। কাজেই এখন থেকেই সচেতন থাকতে হবে।

নৌবাহিনীর পাঁচ যুদ্ধজাহাজ কমিশনিং : আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের জলসীমা সুরক্ষায় নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নৌবহরে সংযোজিত হলো নতুন দুটি আধুনিক ফ্রিগেট বানৌজা ‘ওমর ফারুক’, ‘আবু উবাইদাহ’ ও একটি করভেট যুদ্ধজাহাজ ‘প্রত্যাশা’ এবং দুটি জরিপ জাহাজ বানৌজা ‘দর্শক’ ও ‘তল্লাশি’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে জাহাজগুলো নৌবাহিনীতে কমিশনিং করেন। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধজাহাজসমূহ নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল। এর আগে চট্টগ্রামে বানৌজা ঈসা খান নৌ জেটিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল জাহাজসমূহের অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। নৌবাহিনীর দুটি ফ্রিগেট ‘ওমর ফারুক’ ও ‘আবু উবাইদাহ’র প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১১২ মিটার ও প্রস্থ ১২.৪ মিটার এবং করভেট যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ‘প্রত্যাশা’র দৈর্ঘ্য ৯০ মিটার ও প্রস্থ ১১.১৪ মিটার। যুদ্ধজাহাজসমূহ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। যুদ্ধজাহাজসমূহ শত্রুর বিমান, জাহাজ ও স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে এবং ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইল, অত্যাধুনিক থ্রিডি রাডার, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, র‌্যাডারজ্যামিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধসরঞ্জামে সুসজ্জিত। এ ছাড়া জাহাজসমূহে হেলিকপ্টার অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য রয়েছে ডেক ল্যান্ডিং সুবিধাদি। গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ সময়ব্যাপী মোতায়েনযোগ্য এ জাহাজগুলোর মাধ্যমে বিশাল সমুদ্র এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান ও জলদস্যুতা রোধ, সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা, ব্লু ইকোনমির বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনাসহ মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বরাদ্দকৃত ব্লকসমূহের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কমিশনিং অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর