শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ঘরে-বাইরে বিতর্কে ট্রাম্প

ভোট গণনা বন্ধ করতে টুইট, মিথ্যা বলায় ভাষণ বন্ধ করল গণমাধ্যম, নেতাদের দুষছেন দুই ছেলে

তানভীর আহমেদ

ঘরে-বাইরে বিতর্কে ট্রাম্প

পরাজয়ের কাছাকাছি এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ দল রিপাবলিকান নেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তার পাশে নেই দলের অনেক নেতা। ভোট কারচুপি ও গণনা বন্ধে মামলার পাশাপাশি ট্রাম্প গণমাধ্যমে নিজেকে বিজয়ী দাবি করায় দলের নেতারা তার ওপর বিরক্ত। অনেকে ট্রাম্পের কাছ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছেন। বাইডেন জয়ী হলে রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের একচ্ছত্র আধিপত্য নাও থাকতে পারে। সেসব ভেবেই নিজেদের প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন এই নেতারা। ভোট গণনার শেষ সময়ে এসে জো বাইডেন এগিয়ে থাকার পরিসংখ্যান স্পষ্ট হচ্ছে। তাই রিপাবলিকান দলের অনেক নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানামুখী বিতর্কে জড়াতে চাইছেন না। যেসব অঙ্গরাজ্যের ফলাফল এখনো চূড়ান্ত নয় সেখানে দুটি অঙ্গরাজ্যে পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান সমর্থকরাও ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন জাদুমন্ত্র ছাড়া এখন জয় ছিনিয়ে আনা ট্রাম্পের পক্ষে অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে নেব্রাস্কা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর বেন স্যাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে নিজের সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম হোয়াইট হাউস ডেমোক্র্যাটিক দলের দখলে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সিনেটে রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাগরিক প্রণোদনা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীদের উসকে দিয়েছেন, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছেন- এসব উল্লেখ করে নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে কথা বলেছেন সিনেটর বেন স্যাসে। বেন স্যাসে রিপাবলিকানদের সিনেটে পরাজয় আশঙ্কা করে বলেছেন, এ কারণেই ট্রাম্পের ট্রেন থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। এর আগে ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর চার্লি বেকার ১৫ অক্টোবর করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন। ১৬ অক্টোবর মেরিল্যান্ডের গভর্নর ল্যারি হোগানও একই কথা বলেন। রিপাবলিকান সিনেটর মার্থা ম্যাকুস্যালি, সিনেটর জন করনিন, সুজান কলিন্স বেশ আগে থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের অবস্থান আলাদা করে রেখেছেন। বাস্তব অর্থে  ট্রাম্পের পক্ষে রিপাবলিকান পার্টির লোকজনকেও প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগাম অভিযোগ করায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনাও করছেন।

তবে পরিস্থিতির জন্য রিপাবলিকান দলের নেতাদের দুষেছেন ট্রাম্পের দুই ছেলে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যথেষ্ট সমর্থন না দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন তার দুই ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও এরিক ট্রাম্প। কয়েকটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে যখন ট্রাম্প আর বাইডেনের ভাগ্য নিয়ে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই; তখন টুইটারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র রিপাবলিকান সমর্থকদের উদ্দেশে টুইটারে লিখেছেন, ‘ইচ্ছা ও লড়াই করার সক্ষমতা দেখানোর যথাযথ একটি প্ল্যাটফরম আছে তাদের। তবে উল্টো দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যমের সামনে তারা মুষড়ে পড়ছেন। উদ্বেগের কারণ নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়াই করে যাবেন। আর বরাবরের মতো তারা কেবল দেখতে থাকবেন!’ এরিক ট্রাম্প লিখেছেন, ‘কোথায় রিপাবলিকানরা! কিছুটা হলেও মেরুদ- দেখান। জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়াই করুন। ভেড়ার মতো থাকলে আমাদের ভোটাররা আপনাকে ভুলে যাবে না।’ সক্রিয়ভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন জানাতে রিপাবলিকানদের মধ্যে ঘাটতি দেখার কথা উল্লেখ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র লিখেছেন, ‘উদ্বেগের কিছু নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়াই করবেন। তারা (রিপাবলিকান) তা যথারীতি দেখতে পাবেন।’

এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটের দুই দিন পর জনসমক্ষে এসে বক্তব্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ১৭ মিনিটের এক বক্তৃতায় ট্রাম্প দাবি করেছেন ডেমোক্র্যাটরা ভোট চুরি করে নির্বাচন ছিনিয়ে নিতে চাইছে। ‘বৈধ’ ভোটের নিরিখে তিনিই জয়ী হয়েছেন। ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে অন্তঃসারশূন্য বলে মনে করছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একের পর এক মিথ্যা বলছেন। এ কারণে ট্রাম্পের বক্তব্যের লাইভ সম্প্রচার থামিয়ে দিয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন টিভি। ট্রাম্পের লাইভ সম্প্রচার যে টিভি চ্যানেলগুলো মাঝপথে বন্ধ করে দেয়, তার মধ্যে ছিল এমএসএনবিসি, এনবিসি ও এবিসি। এমএসএনবিসি হোয়াইট হাউস থেকে সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচার করে। বিখ্যাত সাংবাদিক ব্রায়ান উইলিয়ামস সে সময় অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছিলেন। ট্রাম্প তার ভিত্তিহীন বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করলে এমএসএনবিসি সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। ব্রায়ান উইলিয়ামস বলেন, ‘আবারও আমরা একটি ব্যতিক্রমী অবস্থান নিচ্ছি। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্প্রচারই শুধু বন্ধ করছি না, তাকে সংশোধন করেও দিচ্ছি।’ সিএনবিসির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার সময় সাংবাদিক শেফার্ড স্মিথ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যা বলছেন তা সর্বান্তঃকরণে অসত্য।’ বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লাইভ বক্তৃতা সম্প্রচারের সময় নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেছে, ভোটের গণনা এখনো শেষ হয়নি। সিএনএনএনের সাংবাদিক এন্ডারসন কুপার বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিকে আমরা দেখছি, যেন রোদে পোড়া স্থূল কচ্ছপের মতো। ভাসতে ভাসতে যে মনে করছে তার সময় শেষ হয়ে আসছে।’

হতাশ ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে পরপর কয়েকটি টুইট করেন। এখানেও বিপত্তি বেধেছে। টুইটার তাদের নীতিমালার কারণে মুছে দিয়েছে ট্রাম্পের টুইট। একটি টুইটে ট্রাম্প লিখেছেন, ভোট গণনা বন্ধ করুন। এরপর আরেক টুইটে তিনি লিখেছিলেন, এ জালিয়াতি বন্ধ করুন। তারপর আরেকটি টুইটেও তিনি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে লিখেছিলেন, ‘আমরাই জিতব, সবার আগে আমেরিকা।’ প্রথমটি রাখলেও টুইটার তার পরের দুটি টুইট মুছে দিয়েছে। ফলাফল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান উৎকণ্ঠার মধ্যে ট্রাম্প এক বিবৃতিতে তার সমর্থকদের আশ্বস্ত করতে বলেছেন, ‘যদি বৈধ ভোটই শুধু গণনা হয়, তবে আমরা সহজেই জিতব। কিন্তু যদি অবৈধ ও দেরি করে আসা ভোটও গণনা করা হয়, তাহলে তা হবে আমাদের জয় চুরি করে নেওয়া।’

সর্বশেষ খবর