শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সময়মতো সম্মেলন হয় না আসছে না নতুন নেতৃত্ব

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন

রফিকুল ইসলাম রনি

সময়মতো সম্মেলন হয় না আসছে না নতুন নেতৃত্ব

মেয়াদ শেষ হলেও সময়মতো সম্মেলন হয় না আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর। সাত সহযোগী সংগঠন এবং দুই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মধ্যে গত মার্চে মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন সংগঠনের। এগুলো হলো- মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং তাঁতী লীগ। একইভাবে কমিটি ঘোষণার দিন ধরা হলে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু সম্মেলনের উদ্যোগ নেই।

গত বছর নভেম্বর মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই চার সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সবগুলোতেই শীর্ষ পদে এসেছে নতুন নেতৃত্ব। সম্প্রতি যুবলীগ ছাড়া বাকিদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা হয়েছে। গত মার্চ মাসে মেয়াদ শেষ হওয়া তিন সংগঠন ও ছাত্রলীগের সম্মেলন করার নির্দেশনা থাকলেও করোনাসহ নানা কারণে সময়মতো সম্মেলন হচ্ছে না। ফলে নতুন নেতৃত্বও বেরিয়ে আসছে না।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে দ্রুতই ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এক যৌথসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী  ওবায়দুল কাদের মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগকে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

প্রায় ১৪ বছর পর ২০১৭ সালের ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন  হয়। এতে সাফিয়া খাতুন সভাপতি এবং মাহমুদা বেগম কৃক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিন বছর মেয়াদি এই সংগঠনের গত মার্চে মেয়াদ শেষ হলেও সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্মেলনের কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমাদের সম্মেলন হয়েছে মাত্র চার বছর হতে চলল। এখনই সম্মেলন! নির্দেশনা পেলে জানাব বলে মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে নাজমা আকতার সভাপতি ও অধ্যাপিকা অপু উকিল সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পান। এ সংগঠনেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে গত মার্চ মাসে। দলের দুঃসময়ে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সংগঠনটির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় গত ফেব্রুয়ারিতে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া গ্রেফতারের পর। নতুন সম্মেলন প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সবসময়ই প্রস্তুত। নেত্রী যখন নির্দেশ দেবেন তখনই সম্মেলন করা হবে। সূত্রমতে, তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের সম্মেলন ছাড়া কমিটি ঘোষণা করতে নিষেধ করেছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্ব স্ব সংগঠনের গঠনতন্ত্রেও সে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ সে নির্দেশনা মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েক দিন আগে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়েছে সম্মেলন ছাড়াই। এ ছাড়াও সভাপতি করা হয়েছে নিজ সংগঠনের এক কর্মীকে হত্যাপ্রচেষ্টা মামলার আসামি এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স্ক ছাত্রনেতাকে। এ ছাড়াও রংপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের নেতারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে সংগঠনের সম্মেলন হয়। দুই মাস পর ৩১ জুলাই কমিটি ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওই সম্মেলনে রেজওয়ানুল হক শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এক বছরের মধ্যে নানা অনিয়ম ও চাঁদাবাজির দায়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অপসারণ করা হয়। এরপর দায়িত্ব দেওয়া হয় এক নম্বর সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। করোনাসহ নানা কারণে সংগঠনকে গতিশীল করতে পারেননি তারা। অধিকাংশ জেলা শাখাই মেয়াদোত্তীর্ণ নেতাদের দিয়ে চলছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইউনিটিতে সম্মেলন হলেও কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব।  ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ সম্মেলন হয় তাঁতী লীগের। এতে প্রকৌশলী শওকত আলী সভাপতি এবং খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সংগঠনেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে। সম্মেলন নিয়ে কোনো প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যায়নি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ সংগঠনগুলোর সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। প্রত্যেক সংগঠনকেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথাসময়ে সম্মেলন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাকালে আমরা বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনগুলোকে বরাবরই যথাসময়ে সম্মেলনের তাগিদ আমাদের থাকে। এখনো তাদের প্রতি নির্দেশনা হচ্ছে সম্মেলনের প্রস্তুতি রাখতে হবে। যে কোনো সময়ে নেত্রী সম্মেলনের নির্দেশ দিতে পারেন।

সর্বশেষ খবর