শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নানা প্রশ্ন তুলছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

ট্রাম্পের অভিযোগ অনুযায়ী ডেমোক্র্যাটরা যদি ভোট ডাকাতি, ভোট জালিয়াতি আর প্রতারণা করে থাকে তাহলে সিনেট ও কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা জিতল কীভাবে- এ প্রশ্ন এখন জনমনে। প্রচলিত আইন ও করোনার কারণে  ডাকযোগে বিপুলসংখ্যক আমেরিকানের আগাম ভোটে অংশকে প্রথম থেকেই প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং কারচুপির অস্ত্র হিসেবে অভিহিত করে আসছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের ব্রিফিং রুমে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন এবং মঙ্গলবার হওয়া ভোটের ফলাফল ছাড়া অন্যকিছুকে মানতে রাজি নন বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটসহ বোর্ড অব ইলেকশনের কর্মকর্তাদের আচরণের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন- ন্যায়বিচারের জন্য।

আমেরিকানদের মতামতের পরিপন্থী কোনো কাজকে তিনি বরদাশত করবেন না বলেও উল্লেখ করেন।

এ প্রসঙ্গে বাইডেনের পক্ষে ‘দক্ষিণ এশিয়ান জোট’র জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রিপাবলিকান পার্টিতে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী অনেকে রয়েছেন। তারা ভোটারের মতামতের বিপক্ষে কখনই যাবেন না। এ ছাড়া, পোস্টাল ব্যালটের বিধান নতুন নয়। এবার শুধু সেই বিধির সম্প্রসারণ ঘটানো হয় করোনাভাইরাসের কারণে। এনিয়ে বিতর্কের ন্যূনতম অবকাশ থাকতে পারে না।’ ‘এতদসত্ত্বেও যদি ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে যায় ভোটের ফলাফলকে নাকচের অভিপ্রায়ে, তাহলে শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকানরাই রুখে দাঁড়াবেন। কারণ, একই নির্বাচনে কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সদস্য বেড়েছে ৫টি। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অটুট রয়েছে।  ডেমোক্র্যাটরা যদি ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করতেন, তাহলে তারা কী জয়ী হতে পারতেন?’- প্রশ্ন ক্লিনটন আমলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিভিন্ন দেশে দায়িত্বপালনকারী এই বাংলাদেশি আমেরিকান।

আমেরিকা-বাংলাদেশ এলায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এম এ সালাম ট্রাম্পের হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, ‘পোস্টাল ব্যালটের বিধি যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই শত বছরের পুরনো একটি ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে তিনি আক্রমণ করে বলেছেন যে, এর মাধ্যমে জাল ঘটনার অবতারণা হচ্ছে। এ ধরনের কথা বলে তিনি প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং নির্বাচনী বিধির পরিপন্থী আচরণ করছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ সালাম বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকৃত অর্থে রিপাবলিকান পার্টি থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি মার্কিন জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন’। ১৯৮০ সালে রিপাবলিকান স্টেট গভর্নর  রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে হেরে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন যে, বিদ্যমান ভোট-ব্যবস্থাকে সম্মান করার মধ্যদিয়ে আমেরিকানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। চার বছর আগে আমি যে ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলাম, জিমি কার্টার সেভাবেই বিজয়ী হয়েছেন। সুতরাং আমি তাকে স্যালুট জানাচ্ছি।’ যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠক ও লেখক ড. পার্থ ব্যানার্জি এ প্রসঙ্গে প্রচ- ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্প যে ধরনের কথা বলেছেন এবং এখনো বলছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাতে লিপ্ত করার গভীর একটি ষড়যন্ত্র। আসলে ট্রাম্প কখনই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। গত চার বছর যেভাবে মিথ্যাচার করেছেন, তার উপযুক্ত জবাব পাচ্ছেন ব্যালটে। এখন সময় হচ্ছে জনগণের দেওয়া রায়ের পথ ধরে ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করার।’ পার্থ ব্যানার্জি উল্লেখ করেন, ‘ট্রাম্পের উদ্ভট মন্তব্য এবং কোনো প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ হোয়াইট হাউস থেকে করেছেন, তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির সাবেক ১৯ জন স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল। এক যুক্ত বিবৃতিতে ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে আইনের শাসনের দেশ, ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছায় এটি পরিচালিত হয় না। সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী সবকিছু করা হচ্ছে। এ থেকেই অনুমান করা যায় যে, ট্রাম্প এখন যা বলছেন বা করছেন, তার সঙ্গে রিপাবলিকান পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই।’

সর্বশেষ খবর