সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জিএসপি সুবিধা পেতে নতুন করে চেষ্টা করতে হবে

হুমায়ুন কবীর

জিএসপি সুবিধা পেতে নতুন করে চেষ্টা করতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্ব বদলের প্রেক্ষাপটে স্থগিত হয়ে যাওয়া জিএসপি সুবিধা পাওয়ার জন্যে নতুন করে চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন যে রেমিট্যান্স পায় তার তৃতীয় সর্বোচ্চ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আমাদের যে ভাই-বোনেরা এখন সেখানে অনিয়মিতভাবে বসবাস করছেন তারা স্থায়ী হয়ে গেলে রেমিট্যান্সেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের পণ্য রপ্তানি করে। আশা করছি, বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের রপ্তানির স্থানটি খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে সেখানে শ্রমিক অধিকার নিয়ে যে সংগঠনগুলো কাজ করে তাদের ভালো প্রভাব রয়েছে, বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। একই সঙ্গে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার জন্য নতুন করে চেষ্টা করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি।

হুমায়ুন কবীর বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। কারণ, তাদের কূটনৈতিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক বিনিয়োগ অনেক বড়। এ জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক কিছু চায়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের চাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়ার মধ্যে কীভাবে আমরা সমন্বয় করতে পারব। একটি জিনিস যেটা দেখতে পারছি, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার দলের মেনিফেস্টোতে একটি বিষয় তারা বলছেন যে, অভিবাসন বিষয়টিকে তারা ইতিবাচকভাবে ঢেলে সাজাবে এবং নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় বাইডেন বলেছিলেন যে ১ কোটি ১০ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসী এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছে। তিনি নির্বাচিত হলে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়মিত নাগরিক করে নেবেন। যেহেতু এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুব বড় একটি সমস্যা আশা করছি, এ বিষয়ে বাইডেন কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিবেন। এটি নিলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বহু বাংলাদেশি অভিবাসীও লাভবান হবেন। এর ফলে সেখানে অবস্থিত আমাদের ভাই-বোনেরা দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে পারবেন। মার্কিন সমাজে তারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও পাবেন। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, যেহেতু করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ জন্য অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাইডেন যদি স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান তৈরি করতে চান তাহলে তাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। বাইডেন ৭০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন অভ্যন্তরীণ চেষ্টার পাশাপাশি বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর জন্যও চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে বাইরে বিনিয়োগও বাড়বে। বাংলাদেশও চায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুক। আবার মার্কিন কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। কাজেই বাংলাদেশে মার্কিন কোম্পানিগুলোর আসার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে ব্লু ইকোনমির কথা যদি বলা হয়, তাহলে সমুদ্রাঞ্চলে জ্বালানি অনুসন্ধানে যদি মার্কিন কোম্পানিগুলো আসে এখানে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো করোনা ভ্যাকসিন যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আওতায় পায় তাহলে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে পাবে। ব্যবসায়িক সূত্রে পেলে বেশি মূল্যে ভ্যাকসিন নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। হুমায়ুন কবীর বলেন, পরিবেশ ইস্যুতেও বাইডেন বলেছেন তিনি প্যারিস চুক্তিতে ফেরত যাবেন। এমনটি যদি হয় তাহলে বাংলাদেশ জলবায়ু ইস্যুতে যে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এ কারণে যে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। তবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অভ্যন্তরে অনেক কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার আছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সহযোগিতা পেতে হলে আমাদের সততা, স্বচ্ছতা ও অনুুকূল পরিবেশের বিষয়গুলো চর্চা করতে হবে। তবেই দুই দেশের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর সুযোগ আসবে।

সর্বশেষ খবর