সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মায়ের যত্ন সন্তানের পড়ালেখার শর্তে দন্ডিতকে বাড়িতে থাকার সুযোগ

নজির স্থাপন হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইয়াবার মামলায় বিচারিক আদালতে পাঁচ বছর কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবরকে ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মায়ের যত্ন নেওয়াসহ তিন শর্তে জেলে না পাঠিয়ে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছে হাই কোর্ট। ছোট দুই সন্তানকে লেখাপড়া করানো এবং মেয়েকে বাল্যবিয়ে না দেওয়া তার জন্য দেওয়া হাই কোর্টের বাকি দুই শর্ত। এই তিন শর্ত মেনে আগামী দেড় বছর তাকে থাকতে হবে একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে। পাঁচ বছর কারাদন্ডের বিরুদ্ধে আসামির রিভিশন আবেদন খারিজ ও প্রবেশনের আবেদন গ্রহণ করে গতকাল বিচারপতি জাফর আহমেদের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। তবে শর্ত ভাঙলে তার প্রবেশন বাতিল হবে বলেও উল্লেখ করা হয় রায়ে। ১৯৬০ সালের প্রবেশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয় রায়। তবে মাদক মামলার ক্ষেত্রে প্রথম বলে জানা গেছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ রায়ের মাধ্যমে হাই কোর্ট নজির স্থাপন করল।

প্রবেশন হলো একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংশোধনী কার্যক্রম। দন্ডিত ব্যক্তির শাস্তি স্থগিত করে তাকে কারাগারে অন্তরিন না রেখে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ দেওয়া হয় প্রবেশনে। এর মাধ্যমে পুনঃ অপরাধ রোধ এবং একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাকে সহায়তা করা হয়। আদালতে মতির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এনামুল হক মোল্লা। পরে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আসামি মতি মাতবর পাঁচ বছরের সাজার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আসামির সাজা বহাল রেখে প্রবেশনে দেয়। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৪১১টি ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর মতি মাতবরসহ দুজনকে আসামি করে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। মামলার পর মতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত। এ মামলায় তদন্ত শেষে ওই বছরই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ ঢাকার যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত-৩ আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি দুই আসামিকে পাঁচ বছর করে কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে রায় দেয় আদালত। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা মহানগর দায়রা আদালতে আপিল করে। মহানগর দায়রা আদালত-৭ আপিল খারিজ করে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখে। রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১ জুলাই হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন মতি। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট ৯ জুলাই জামিন দেয়। ২০ মাস পর মতি ছাড়া পান। এদিকে হাই কোর্টে মামলাটির মূল শুনানি শুরু হয়। আইনজীবী শিশির মনির আদালতে বলেন, মামলাটিতে প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০-এর ৫ ধারা অনুযায়ী আদেশ দেওয়া যেতে পারে। মতির আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো রেকর্ড নেই। সে কারণে তিনি প্রবেশন আইনে সুযোগ পেতে পারেন। এ ছাড়া ওই মামলায় তিনি ২০ মাস কারাগারে ছিলেন। আদালত মতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ১০ দিনের মধ্যে তার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং টিন নম্বর খুলে দিতে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতিকে নির্দেশ দেয়। পরে আদালত অ্যান্টিসিডেন্ট রিপোর্ট প্রদানের জন্য আরেকটি আদেশ দেয়। ২ নভেম্বর আদালতে অ্যান্টিসিডেন্ট রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়। ওই রিপোর্টে আসামি সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আদালত তাকে প্রবেশনে দেয়।

সর্বশেষ খবর