শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতিতে বাইডেন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতিতে বাইডেন

রুদ্ধশ্বাস এক জয়ে হোয়াইট হাউসের দরজা উন্মুক্ত হয়েছে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বনেতাদের অভিনন্দনও পাচ্ছেন তিনি। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ব্যস্ততা এখন ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতিতে। নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছেন বাইডেন। ইঙ্গিত দিয়েছেন করোনা পরিস্থিতি, অর্থনীতি, বর্ণবাদ ও জলবায়ু বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ পুনর্বিবেচনার। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী স্থানীয় সময় ২০ জানুয়ারি দুপুরে শপথ নেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। সবকিছু ঠিক থাকলে ওই দিনই অভিষেক হতে যাচ্ছে নতুন প্রেসিডেনশিয়াল জুটি জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হোয়াইট হাউসে উঠতে বেশ কিছু ধাপ ও আনুষ্ঠানিকতা পার করতে হবে বাইডেনকে। এরই মধ্যে সেসব ধাপ কীভাবে সামলাবেন তা ঠিক করতে উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তিনি। ক্ষমতা গ্রহণের জন্য এরই মধ্যে গঠন করা হয়ে গেছে ট্রানজিশন দল। তবে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন করোনা পরিস্থিতি, অর্থনীতি, বর্ণবাদ ও জলবায়ু বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ পুনর্বিবেচনা করার। এ ক্ষেত্রে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা এবং বিনামূল্যে ও কম সময়ে করোনা পরীক্ষা করানো আর করোনা মোকাবিলায় কর্মপন্থা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন। প্রথা অনুযায়ী ওয়াশিংটন ডিসিতে অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে শপথ পড়াবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তবে করোনার কারণে এবার সে অনুষ্ঠানেও হয়তো কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। এদিকে স্ত্রী-সন্তান-জামাতাসহ রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষস্থানীয় অনেকের অনুরোধ সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইডেনের বিজয় মেনে নিতে সম্মত হননি। অধিকন্তু জনরায়ের বিপরীত অবস্থানে গিয়ে নির্বাচনে কারচুপির উদ্ভট অভিযোগে আইনি লড়াইয়ের পথেই হাঁটছেন। এ ব্যাপারে তিনি রবিবার রাত পর্যন্ত অনড় রয়েছেন বলে ট্রাম্পের আইন-উপদেষ্টাদের অন্যতম এবং তার ব্যক্তিগত আইনজীবী নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশও বিপুল বিজয়ের জন্য জো বাইডেনকে রবিবার অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর এভাবেই ট্রাম্পের কাছ থেকে সরে যাচ্ছেন রিপাবলিকান পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। ট্রাম্পের আচরণে অতিষ্ঠ অনেক দেশের প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী/চ্যান্সেলররা ইতিমধ্যে বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এমন অবস্থায় ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের দিনই করোনাভাইরাস নির্মূল/দমন/প্রতিরোধ কল্পে বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে যথাযথ উদ্যোগ নেবেন বলে বাইডেন টিমের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান। বাইডেন টিমের ওয়েবসাইটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন যে, ট্রাম্পের চার বছরের অবজ্ঞা-অবহেলা-হাসি-ঠাট্টায় জর্জরিত সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চার বিষয়ে কাজ শুরু করতে হবে। এগুলো হচ্ছে- করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, বর্ণবৈষম্যের অবসান ও জলবায়ু পরিবর্তন।

ওয়েবসাইটে তারা আরও বলেন, বাইডেন-কমলা প্রশাসন কাজ করবে ট্রানজিশন টিমের নির্দেশনা অনুসারে, যা মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনব্যবস্থাকে সুসংহত করবে। একই প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটাবে এমন অর্থনীতির ভিত তৈরি করা হবে। ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের এক ঘণ্টার মধ্যেই বাইডেন জাতিসংঘে চিঠি দেবেন জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকর আশঙ্কা রোধে বিশ্বব্যাপী চলমান কর্মযজ্ঞে পুনরায় যোগদানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে। একই সঙ্গে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে আসার সিদ্ধান্তকেও পাল্টে দেবেন অর্থাৎ ওই চুক্তির অন্যতম অংশীদার হিসেবে ১৭৪টি দেশের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। একই দিনে বাইডেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ‘ন্যাশনাল সাপ্লাই চেইন কমান্ডার’ নিয়োগ করবেন এবং স্থাপন করবেন ‘পেনডামিক টেস্টিং বোর্ড’। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বাইডেন সরকারি কর্মচারীদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দেবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এ অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদি কারণে উদ্বাস্তুদের অধিক হারে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রদানের পাশাপাশি ঘরহীন মানুষের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের যে অঙ্গীকার করেছেন, তা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন। ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন তা প্রত্যাহারের পাশাপাশি সব দেশের প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ওয়াশিংটনে সাদর আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রীতির বন্ধন পুনঃপ্রতিষ্ঠায়ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে উল্লেখ করেছেন জো বাইডেন। অভিবাসন সংস্কার, সবার জন্য চিকিৎসাসেবার গ্যারান্টি ইত্যাদি পদক্ষেপ শতভাগ পূরণে দরকার হবে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা। সিনেট যদি রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে যায়, তাহলে কীভাবে তা সম্ভব হবে- এ নিয়েও ভাবছেন ডেমোক্র্যাট নীতিনির্ধারকরা। প্রেসিডেন্ট ওবামার পরিবেশ সুরক্ষার নীতিসমূহ সামনে এনে কাজ করার জন্য নিজের নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতেও কার্পণ্য করবেন না বলে বাইডেন ওয়েবসাইটে মন্তব্য করেছেন। কারণ, সেসব কার্যক্রম নিতান্তই আমেরিকানদের সামগ্রিক স্বার্থে নেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প এসে তা স্থগিত করেছেন প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে। এদিকে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বাইডেনকে মেনে নিয়ে গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানাতে ট্রাম্প এখনো রাজি হচ্ছেন না তার ব্যক্তিগত আইনজীবী জুলিয়ানির পরামর্শে। নানাভাবে ট্রাম্পকে তিনি আশ্বস্ত করছেন, মামলায় বাইডেন জয়ী হতে পারবেন না। তাই এক্ষুনি নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেওয়া উচিত হবে না বলেও ট্রাম্পকে জানিয়েছেন। যদিও ট্রাম্পের অধিকাংশ উপদেষ্টাই মামলায় তেমন উৎসাহ দেখাননি। এমনকি তারা আকারে ইঙ্গিতে ট্রাম্পকে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, মামলায় বাইডেনের বিজয় ঠেকানো সম্ভব হবে না। যেসব অভিযোগে মামলায় যাচ্ছেন তা প্রমাণের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত হাতে নেই বলেও তারা উল্লেখ করেছেন। এদিকে বিজয় সমাবেশে প্রদত্ত বক্তব্যকে অভিনন্দিত করে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি বাইডেনকে। শনিবার রাতে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন সেটিকে সত্যিকারের একজন দেশপ্রেমিক মানুষের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছি।’ এ বিবৃতির আগে বুশ ফোন করেছিলেন বাইডেনকে অভিনন্দন জানাতে। তিনি কমলা হ্যারিসকেও ফোন করেন। তাকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। বুশ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আমাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আমি বাইডেনকে চিনি একজন ভালো মানুষ হিসেবেই। তিনি বড় ধরনের একটি সুযোগ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করার নেতৃত্ব দিতে।’ বুশ উল্লেখ করেন, ‘এ নির্বাচনটি যে মৌলিক অর্থেই সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তা নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই।’ উল্লেখ্য, কোনো প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্প গলাবাজি করছেন যে নির্বাচনে ভোট কারচুপি রয়েছে, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রেজাল্ট ছিনতাই করা হয়েছে। আরও উল্লেখ্য, ইউএস সিনেটে রিপাবলিকান নেতা সিনেটর মিচ ম্যাককনেল এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে বাইডেনের বিজয়কে স্বীকার করতে পারেননি ট্রাম্পের ভয়ে। ট্রাম্প যে ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তা অপমানকর বলেই প্রকাশ্যে বাইডেনকে অভিনন্দন না জানালেও নীতিগতভাবে এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের সঙ্গে তিনি একমত নন বলে ঘনিষ্ঠজনদের কাছে উল্লেখ করেছেন। তবে ইউটাহ্্র সিনেটর (রিপাবলিকান) মিট রমনি ও আলাস্কার সিনেটর (রিপাবলিকান) লিসা মুরকোউস্কি অভিনন্দন জানিয়েছেন বাইডেনকে। নিউজার্সি স্টেটের সাবেক রিপাবলিকান গভর্নর ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্রিস ক্রিস্টি এবিসি টিভির একটি অনুষ্ঠানে বাইডেনের বিজয়কে স্বীকার করেছেন এবং মন্তব্য করেন যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত চার বছরে ট্রাম্পের অ-আমেরিকানসুলভ আচরণেরই আখেরি প্রকাশ ঘটছে মামলার হুমকির মাধ্যমে। ক্রিস্টি বলেছেন, ‘ভোট চুরির পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে দেখান, আমিও কোর্টে যাব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর