মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরাতে জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীর কাছে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরাতে জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীর কাছে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয় বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতোই অন্তরালের বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, এ দেশের জনগণ থাকবে, তত দিনই বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।

রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য পুনরায় আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা চাই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যাক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। দেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় সংসদের এ বিশেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, বিএনপি দলীয় এমপিসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সবাই মুজিবকোট গায়ে অধিবেশনে আসন গ্রহণ করেন। সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেওয়ার আগে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি শোনানো হয়। এ সময় বারবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে চোখ মুছতে দেখা যায়। এর আগে রাষ্ট্রপতি সংসদ কক্ষে প্রবেশ করলে বিধি মোতাবেক জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ সব সংসদ সদস্য দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে জানতে হলে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। এ দুই সত্তাকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা যারা করেছেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আজকের বাস্তবতা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ তিনি বলেন, করোনা মহামারী আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা সাময়িক বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে করোনাসহ সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে বাঙালি জাতি কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে এবং গড়ে তুলবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। জনগণের ঐক্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঐক্য। যে ঐক্য একাত্তরে আমাদের এক করেছিল, সে ঐক্যই গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। যারা বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পিত কাহিনি ও পরিস্থিতি বানিয়ে দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে দেশের শান্তি ও অগ্রগতির ধারা ব্যাহত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তা হলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন।

রাষ্ট্রপতি করোনা মহামারীবিরোধী সরকারি কর্মকা-ের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস মানবসভ্যতাকে ইতিহাসের এক চরম বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর অপার সম্ভাবনাময় বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। করোনার প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি, কর্মহীন হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। উন্নত বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পসহ অর্থনীতির সব সেক্টরে। ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। জীবনযাত্রায় নেমে আসে অচলাবস্থা। এ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১ দফা নির্দেশনা, সময়োচিত সাহসী সিদ্ধান্ত এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে যাচ্ছে।

করোনার ভ্যাকসিন যেন সবাই পেতে পারে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ ভ্যাকসিন বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চল যাতে একই সময়ে ও সমভাবে পায় তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা জেনে আশাবাদী যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যথাসময়ে ভ্যাকসিন পাওয়ার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশকে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য পুনরায় আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা চাই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যাক। ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই দেশে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শুধু মানবিক বিবেচনায় পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে আগত প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এসব শরণার্থীকে নিজ দেশে সসম্মানে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বিশ্ব ফোরামে বারবার বিষয়টি উত্থাপন করেছে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন, গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপিত হয়েছে এবং আদালত মিয়ানমার সরকারের প্রতি প্রাথমিক কিছু নির্দেশনা জারি করেছে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, জলে-স্থলে-আকাশে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বাংলাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই আরাধ্য কাজ সম্পন্ন করেছেন, বাংলাদেশের স্থল ও সমুদ্র সীমা স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করেছেন। ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে যা সফলভাবে কাজ করছে। এ সরকারের অন্যতম কৃতিত্ব হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখনো চলমান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ বিচার অন্যতম মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর সংসদীয় রাজনীতিচর্চার প্রতি আলোকপাত করে বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের যত অমিলই থাকুক না কেন বঙ্গবন্ধু কখনো বিরোধী দলের নেতাদের কটাক্ষ করে কিছু বলতেন না। বরং তাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। রাজনৈতিক শিষ্টাচার তাঁর জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি বলেন, গণপরিষদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র সব মিলিয়ে সদস্যসংখ্যা ১০-এ উন্নীত হয়নি। কিন্তু বিরোধী সদস্যরা প্রতিবাদমুখর ছিলেন, দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রাখার সুযোগ পেতেন। সংসদ অধিবেশন হতো প্রাণবন্ত। যুক্তিতর্ক ও মতামত উপস্থাপন ছিল খুবই আকর্ষণীয়। সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল সংসদে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি ও তাঁর ভাষণ। আমার স্পষ্ট মনে আছে ন্যাপ থেকে নির্বাচিত তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা। পার্লামেন্টে বক্তৃতা করার সুযোগ চাইলে সব সময়ই তিনি সুযোগ পেতেন। স্পিকার মাঝেমধ্যে তাঁকে মাইক দিতে না চাইলেও বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘ওকে সুযোগ দেন, বিরোধী পক্ষের কথা আগে শুনতে হবে।’ সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শুধু যে আমাদের দলীয় সদস্য থেকে কমিটি করব তা নয়, দল-মত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে, জনগণকে যাতে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী একটা সুষ্ঠু সংবিধান দেওয়া যায়, এই উদ্দেশ্যে সকলের মতামত চাইব, এই সংবিধানে মানবিক অধিকার থাকবে, যে অধিকার মানুষ চিরজীবন ভোগ করতে পারবে।’ এ ছাড়া পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্পিকার বিব্রত হতেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হতেন না। উদার না হলে, গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন না হলে এটা ভাবাই যেত না। ১৯৭৩ সালে পার্লামেন্টে আতাউর রহমান খান, এম এন লারমাসহ বিরোধী দলের কয়েকজন এমপি ছিলেন। তখনো দেখেছি তারা কথা বলতে চাইলেই সুযোগ পেতেন। প্রায় সময় বঙ্গবন্ধুই স্পিকারকে বলে সে সুযোগ করে দিতেন। বিরোধী দলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আলাদা একটা মনোযোগ ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সংসদ কার্যক্রমের পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলার ব্যাপারেও ছিলেন খুবই সচেতন। এ প্রসঙ্গে প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মাননীয় সংসদ সদস্যদের আর একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, কোনো প্রস্তাব আনার আগে পার্টিতে তা আলোচনা করে তারপর উপস্থাপন করবেন। তা না হলে এর দ্বারা পার্টির শৃঙ্খলা নষ্ট হবে।’ বাকশাল গঠন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় দেশ ও জনগণের উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও বিকাশের কথা ভাবতেন, গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্বাস করতেন সংসদীয় গণতন্ত্রে। যদিও দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্য নিশ্চিতকরণ, দেশের উন্নয়ন এবং দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ গঠন করেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের মাটিতে পা রেখেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের কাজে নেমে পড়েন। তিনি কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, পর্যটন, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগসহ খাতভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভূমি সংস্কার, সেচযন্ত্র স্থাপন এবং ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির খাজনা মওকুফ করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জায়গা বরাদ্দ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন এবং পঙ্গু হাসপাতাল স্থাপনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে জাতি আজও পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। বঙ্গবন্ধু সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকার এবং রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সম-অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা প্রদান করেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতেও উদ্যোগী হন। বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও কূটনৈতিক দক্ষতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনসহ ভারত-প্রত্যাগত শরণার্থীদের পুনর্বাসন এবং গরিব-দুঃখী মানুষের কল্যাণেও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শোষিত ও নিপীড়িত জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তথা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বশান্তি পরিষদ তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘জুলিও কুরি’ পুরস্কারে ভূষিত করে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্?যাপন উপলক্ষে আপামর জনগণের আর্থিক সহায়তার জন্য চালু করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দেশের ১০০ উপজেলায় পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল বিতরণ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি ‘কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর’ শিরোনামে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে সারা দেশে ১ কোটি বৃক্ষ রোপণ এবং সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতকরণে গৃহহীন-আশ্রয়হীনদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সারা দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুব উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স প্ল্যাটফরম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাব। একটি রাজনৈতিক দল যখন এভাবে কাজ করে তখন জাতির উন্নতি ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়। সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দল-মত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। মুজিববর্ষে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

সর্বশেষ খবর