বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় বাবুর্চিসহ ১০ জন রিমান্ডে পরিচালক গ্রেফতার

নিজস্ব ও আদালত প্রতিবেদক

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনিসুল করিম হত্যা মামলায় রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-এডিকশন হসপিটালের বাবুর্চি, ওয়ার্ডবয়সহ ১০ জনকে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এদিকে  গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালের পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এসআই মনিরুজ্জামান মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, এএসপি আনিসুল মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এ কারণে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে আনিসুলকে নিয়ে অন্য স্থানে চিকিৎসার বিষয়ে অলোচনা করেন। কিন্তু জোর করে আসামিরা ভর্তির ফরম পূরণ করেন এবং কয়েকজন কর্মচারী আনিসুলকে দোতলায় নিয়ে যান। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এর কিছুক্ষণ পর পরিবারের লোকজনকে জানানো হয়, আনিসুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। এরপর তারা তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আনিসুলকে মৃত ঘোষণা করেন। রিমান্ডে আনা ১০ আসামি হলেন মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-এডিকশন হসপিটালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কথিত ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম পলাশ ও বাবুর্চি মো. মাসুদ। মামলা সূত্রে জানা গেছে, এএসপি আনিসুলকে হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। কিন্তু সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার পরও আসামিরা জোর করে ভর্তির ফরম পূরণ করেন এবং কয়েকজন কর্মচারী আনিসুলকে দোতলায় নিয়ে যান। পরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন। গতকাল দুপুরে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. হারুন অর রশীদ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মাইন্ড এইড হাসপাতালে এএসপি আনিসুল করিমের নিহতের ঘটনাটি একটি হত্যাকান্ড। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার তদন্তে ওই হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেলা পৌনে ১২টায় গ্রেফতার ব্যক্তিরা এএসপি আনিসুলকে হাসপাতালের দোতলার একটি কক্ষে মারতে মারতে ঢোকান। তাকে ওই কক্ষের মেঝেতে জোরপূর্বক উপুড় করে তিন-চারজন হাঁটু দিয়ে পিঠের ওপর চেপে বসেন। এ সময় কয়েকজন পিঠমোড়া করে ওড়না দিয়ে আনিসুলের দুই হাত বাঁধেন। কয়েকজন অভিযুক্ত কনুই দিয়ে ঘাড়ের পেছনে ও মাথায় আঘাত করেন। ফলে এএসপি আনিসুল বেলা ১২টায় নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরিকল্পিতভাবে আসামিরা মারধর করে তাকে হত্যা করেছেন। ইতিমধ্যে আমরা হাসপাতালের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি।’ ডিসি হারুন বলেন, হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য বৈধ কাগজপত্র ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন নেই। নেই চিকিৎসকও। এটি একটি ভুঁইফোড় হাসপাতাল। তারা অবৈধভাবে মানসিক রোগীর চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করে আসছিল। এই হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। হাসপাতালটিতে কয়েকজন রোগী আছেন। তারা চলে গেলে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হবে। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এডিসি মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, এএসপি আনিসুল করিমকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-এডিকশন হসপিটালের পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হলো। প্রসঙ্গত, ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার সদস্য আনিসুল করিম ব্যাচে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অত্যন্ত মেধাবী এই কর্মকর্তা কর্মজীবনে ডিএমপি, র‌্যাব, পুলিশ সদর দফতর ও সর্বশেষ বিএমপিতে কর্মরত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর