বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালে নগদ সহায়তা পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাকালে নগদ সহায়তা পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে

ড. ইফতেখারুজ্জামান

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত নগদ সহায়তা পেতে গ্রহীতার ঘুষ দিতে হয়েছে। সরকারের ২ হাজার ৫০০ টাকার নগদ সহায়তা পেতে প্রত্যেক উপকারভোগীকে গড়ে ২২০ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। নগদ সহায়তার তালিকাভুক্ত হতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ১২ শতাংশ উপকারভোগী। তিনি গতকাল অনলাইনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জ : দ্বিতীয় পর্বের গবেষণা’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবির জরিপে নগদ সহায়তা উপকারভোগীর ১২ শতাংশ তালিকাভুক্ত হতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তির সুপারিশ, অনেকবার অনুনয়-বিনয়, নিয়মবহির্ভূত অর্থ বা ঘুষ দেওয়া, টাকা না পাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। কার্ডের মাধ্যমে বিশেষ ওএমএস চাল (১০ টাকা কেজি দরে) সহায়তায় উপকারভোগীর ১০ শতাংশ তালিকাভুক্ত হতে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট কর্তৃক কমিশন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নগদ সহায়তা কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান/মেম্বার/কাউন্সিলর, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। দুদকের সরাসরি ও হটলাইনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, তারা প্রকৃত দুস্থদের বঞ্চিত করে করোনাকালে সরকারের দেওয়া ত্রাণ ও নগদ অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সাময়িক বরখাস্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণসহ মামলা পরিচালনা করতে হবে। এসব জনপ্রতিনিধিকে পরবর্তী যে কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা বাতিল ঘোষণা করতে হবে।

করোনা মোকাবিলায় দুর্নীতি বন্ধে টিআইবি ১৫ সুপারিশ তুলে ধরে। এগুলো হচ্ছে- ১. স্বাস্থ্য খাতের সব ধরনের কেনায় সরকারি ক্রয় আইন ও বিধি অনুসরণ। ২. করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য দ্বিতীয় পর্যায়ের আঘাত মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন। ৩. বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষার সুবিধা সব জেলায় সম্প্রসারণ, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো। ৪. ব্যবহৃত সুরক্ষাসামগ্রীসহ চিকিৎসাবর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ৫. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতালের সেবাগুলোকে (আইসিইউ, ভেনটিলেটর ইত্যাদি) করোনা চিকিৎসাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তকরণ। ৬. বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতরের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি। ৭. দেশজুড়ে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার জন্য সরকারি বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। ৮. সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে নিয়মিত সভা করা এবং করোনায় সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ৯. করোনাসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে যে বিধিনিষেধ রয়েছে তা বাতিল। ১০. গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে সরকারি ক্রয়, করোনা সংক্রমণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, ত্রাণ এবং প্রণোদনা বরাদ্দ ও বিতরণ ইত্যাদি বিষয়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতকরণ। ১১. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল বা সংশোধন এবং হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার। ১২. বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা যাচাই-বাছাই ও হালনাগাদ করণ এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ। ১৩. স্বাস্থ্য খাতে কেনায় তদারকি বৃদ্ধিকরণ এবং অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। ১৪. সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সাময়িক বরখাস্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণসহ মামলা পরিচালনা। এসব জনপ্রতিনিধির পরবর্তী যে কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা বাতিল। ১৫. সম্মুখসারির সব স্বাস্থ্যকর্মীর প্রাপ্য প্রণোদনা দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর