বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি শ্লথ

ড. এম এম আকাশ

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি শ্লথ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ বলেছেন, ‘কভিডের পর যারা নতুন করে ব্যবসা শুরু করছেন, তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে না পারায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি শ্লথ। এ ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতিটা শ্লথ। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে যার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়বে। এ জন্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা, কভিড-পরবর্তী অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি ফেরানো ও ব্যবসা-বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে হলে অপ্রাতিষ্ঠানিক ও এসএমই খাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। একইভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সতর্কতার সঙ্গে ধাপে ধাপে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। মার্চ পর্যন্ত অবস্থা নিকট পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত হবে।’ তিনি বলেন, কভিড পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্বে প্রধান বিপদের দিক হলো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। এর মধ্যে যারা টুকটাক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন, অথবা দিনমজুর- এরাই তো ৮৫ শতাংশ। এ খাতের লোকেরা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন অনেকেই। কভিডের পরে দেশের দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যা আগে ছিল ২০ শতাংশ, এখন তা ৪০ শতাংশ। এটা কিন্তু শুধু দেশে নয়, আমেরিকায়ও হয়েছে। কিন্তু ধনীরা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হননি। আমেরিকান চেম্বারপ্রধানও এ সম্পর্কে একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন, যেটা ইংরেজি অক্ষর কে কার্ভের মতো। এর একটি রেখা ওপরের দিকে। আর অন্য রেখাটি নিচের দিকে। অর্থাৎ ধনীরা ধনীই হচ্ছেন আর গরিবরা হচ্ছেন আরও গরিব । এ কভিডের সময়ও কিন্তু এটা অব্যাহত আছে। বরং গরিবরা এখানে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

ড. আকাশ বলেন, ‘এখন দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকানোর কৌশল হিসেবে দুই রকম প্রোপ্রাম নিতে হবে। এর জন্য বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে টার্গেট গ্রুপ অরিয়েন্টেড কর্মসূচির দিকে। এতে ইতিমধ্যে যারা তলিয়ে গেছেন তাদের উদ্ধার করতে হবে। যারা পুঁজি হারিয়েছেন, অনেকেই প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছেন না, এতে তার আয়ু ও পুষ্টি কমে যাচ্ছে। এই নতুন দরিদ্র এবং পুরনো দরিদ্রদের জন্য জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নিতে হবে। এটা অবশ্য আছে। তবে একে আরও কার্যকর করতে হবে। এটা এখন শুধু গ্রামে রয়েছে। এটাকে শহরেও আনতে হবে। এটা যারা বাস্তবায়ন করেন, সেখানেও কাজ করতে হবে। যারা সহায়তা পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছেন না। আবার যারা পাওয়ার কথা নয় তারা পেয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সঠিক লোক খুঁজে বের করে সহায়তা দিতে হবে। এতে আইসিটি টেকনোলজিও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর জন্য একটি স্থায়ী কর্মসূচি নিতে হবে। আবার যারা দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে যাবেন, তাদের প্রতি বছর বাছাই করে এ কর্মসূচি থেকে বাদ দিতে হবে। এটা একটা বিশেষ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য রেশনের মতো কার্যক্রম হতে পারে। এটা ভারতে আছে। এটাকে বলা হয় খাদ্য অধিকার সুরক্ষার মৌলিক আইন। আমাদের দেশে এটা প্রণয়নের কাজ চলছে। দ্রুত পাস করা প্রয়োজন।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, একই সঙ্গে এসএমই খাতের লোকদের সঠিক ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সবকিছুই ঠিক করে ফেলেছে। কিন্তু বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে ব্যাংকগুলো এটা দিচ্ছে না। এখানে দেখতে হবে ব্যাংকগুলো কেন দিচ্ছে না। এখানে অপারেশনাল কস্ট বাড়বে এ কারণে দিচ্ছে না, নাকি অন্য কোনো সমস্যা আছে, তা দেখতে হবে। আবার ব্যাংকগুলো বেশি মুনাফা করতে চাইছে কি না তাও দেখতে হবে। এর একটা স্টাডি হওয়া দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর