বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রমাণ মেলেনি মার্কিন নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির

ট্রাম্পের আচরণে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি : বাইডেন

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রমাণ মেলেনি মার্কিন নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির

কিছুতেই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিচ্ছেন না পরাজিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উল্টো তিনি আইনি ব্যবস্থার নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলছেন। অথচ নির্বাচন নিয়ে রাজ্য সরকারের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষও পর্যন্ত বলছে, তারা ভোট জালিয়াতির কোনো প্রমাণ পায়নি। এ অবস্থায় নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্পের এ ধরনের আচরণ এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। সূত্র : রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ট্রাম্পের আইনি ব্যবস্থার হুমকিতে কিছুই থেমে থাকবে না।’ বিভিন্ন রাজ্যে ট্রাম্প শিবিরের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন বলেন, ‘কোনো কিছুই ক্ষমতা হস্তান্তরকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। যাই ঘটুক না কেন, ২০ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে- সে ব্যাপারে এরই মধ্যে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের নির্বাচনের ফল মেনে না নেওয়া বিব্রতকর।’ জো বাইডেন ডেলোয়ারা রাজ্যে তাঁর বাড়িতেই আছেন। সেখানেই তিনি এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর বক্তব্য নিয়ে বাইডেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। বাইডেন বলেছেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজকর্ম এগিয়ে চলছে।’ জো বাইডেন জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে এর মধ্যেই তাঁর ফলপ্রসূ সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কথা বলেছেন ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা ও আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে। বাইডেন জানান, তিনি রাষ্ট্রনেতাদের বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরে এসেছে।’ ‘যুক্তরাষ্ট্র আর একা নয়’ উল্লেখ করে বাইডেন উল্লেখ করেন, তিনি নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রকে আবার আগের মতো বিশ্বের শ্রদ্ধার জায়গায় ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। এদিকে আগামী ২০ জানুয়ারি সম্ভাব্য শপথ গ্রহণের পর নিজ প্রশাসনের অগ্রাধিকার তালিকা নিয়ে যখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বাইডেন, তখন তাঁর বিজয়কে উল্টে দিতে বড় ধরনের কোনো প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলছেন ট্রাম্প। ভোট গ্রহণ ও ভোট গণনায় অনিয়মের অভিযোগ এনে এরই মধ্যে ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে ডজনখানেক মামলা করা হয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে বাইডেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো সহযোগিতা করছে না ট্রাম্প প্রশাসন। এখন পর্যন্ত বাইডেনের বিজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হোয়াইট হাউসও। ট্রাম্প টুইট করে জানিয়েছেন, ‘শেষ পর্যন্ত তিনিই জয় পাবেন।’

উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রাজ্য পর্যায়ের ফল সরকারিভাবে ঘোষিত হয়নি, বেশ কয়েকটি জায়গায় ভোট গণনা এখনো চলছে। এই রাজ্যগুলোর ফল নির্ধারিত হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল কলেজের বৈঠকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষিত হবে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার কথা। এর আগেই বিদায়ী ও আসন্ন প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি সেরে নিতে হয়। তবে ট্রাম্প এখনো হার মেনে না নেওয়ায় সেই সমন্বয়ের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। রয়টার্স/ইসপোস পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুললেও যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ মানুষ এটি বিশ্বাস করে না। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৮০ ভাগই বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এই ৮০ ভাগের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক।

তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে রাজ্য সরকারের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ কোনো বড় ধরনের জালিয়াতি ও কারচুপির প্রমাণ পায়নি। প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, তারা ৪৫টি রাজ্যের নির্বাচন অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কোনো রাজ্যই বড় ধরনের কোনো কারচুপির কথা জানাতে পারেনি। পত্রিকাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিনেসোটার সেক্রেটারি অব স্টেট স্টিভেন সাইমন জানিয়েছেন, তাঁদের রাজ্যে একজন মানুষও ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো বিতর্কে যাননি। কোথাও কোনো জালিয়াতি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচন রাজ্য সরকারের নির্বাচন অফিস পরিচালনা করে। এসব নির্বাচনী অফিস স্বাধীনভাবে কাজ করে। রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট নির্বাচনী ফল প্রকাশের দায়িত্বে থাকেন। রাজনৈতিক বিতর্ক থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ নির্বাচনী অফিসের প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কখনো সন্দেহ প্রকাশ করে না। সবাই বিশ্বাস করে, এসব প্রতিষ্ঠান আইন অনুযায়ী কাজ করে। এখানে কারও পক্ষপাত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কানসাস রাজ্যের রিপাবলিকান সেক্রেটারি অব স্টেট স্কট সোয়াব বলেন, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে কোনো ভোট জালিয়াতি, ভোট কারচুপি বা অনিয়ম তিনি প্রত্যক্ষ করেননি। তিনি রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। মিশিগান রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ট্রাম্পের প্রচার শিবির রাজ্যের অ্যাবসেন্টি ভোট ও ডাকযোগে পাওয়া ভোটের গণনা নিয়ে মামলা করার কথা বলেছে। তবে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো জালিয়াতি-কারচুপির অভিযোগ বা প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই।

নির্বাচনের রাত থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রচার শিবির পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের ভোট গণনা নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন। এ রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল জোস শাপিরো নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, পেনসিলভেনিয়ার ভোট নিয়ে ট্রাম্পের একাধিক মামলা এর মধ্যেই বাতিল হয়ে গেছে। এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

খবরে আরও বলা হয়, প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচনী অফিসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রধান সংবাদমাধ্যম জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে। রাজ্যগুলো থেকে সব দাফতরিক বাধ্যবাধকতা অবলম্বনের পর রাজ্য থেকে যাচাই করে ফল কেন্দ্রে পাঠানো হয়। জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে না হলেও ওয়াশিংটনের পরিস্থিতি নিয়ে চাপা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ডেমোক্র্যাটরা যেমন কোনো কিছু নিয়েই নিশ্চিত হতে পারছেন না, তেমনি ট্রাম্পসমর্থকেরা বিমর্ষ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা ক্ষমতা গ্রহণের পালাবদল মসৃণই হবে!’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য তিনি কৌতুক করে বলেছেন কি না, তা টের পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নানামুখী সংবাদ পরিবেশন করেছে। ‘রিপাবলিকানরা পরাজয় মেনে নিচ্ছেন না’ এমন বিষয় বাইডেনকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেছেন, ‘তারা মানবে, অবশ্যই মানবে।’ মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোয় বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজয় মেনে নেওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজনকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এ কারণেই ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কা, জামাতা জ্যারেড কুশনার, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ মার্ক মেডৌসের নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর