বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাধ্যতামূলক ছুটিতে গেলেও মুক্তি নেই সুধাংশুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাধ্যতামূলক ছুটিতে গেলেও মুক্তি নেই সুধাংশুর

‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ নামের প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলেও মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পর এখন মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ডাক বিভাগের ৫৪১ কোটি টাকার ‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ ওঠে ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সুধাংশু শেখর ভদ্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে, দেশের উপজেলা পর্যায়ে ই-পোস্ট অফিস স্থাপনের নামে তিনি এ অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সুধাংশু শেখরকে গতকাল থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে সরকার। এর আগে গত মঙ্গলবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় তাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১১/১১/২০২০ থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়ার আদেশ জারি করে।

জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক-এ সুধাংশু শেখরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। ইতিমধ্যে দুদক সেসব আভিযোগ যাচাই বাছাই করে তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের একটি সূত্র জানায়, ডাক বিভাগের ডিজির দুর্নীতির পাশাপাশি বিদেশে অর্থ পাচারের যে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের করা হবে। ডাক বিভাগ এবং দুদক-এর সূত্রগুলো বলছে, এ যাত্রায় আর মুক্তি পাচ্ছেন না সুধাংশু শেখর ভদ্র। তিনি পুরো ডাক বিভাগকে নিজের পেটের ভিতর নিয়ে গিয়েছিলেন। ডাক বিভাগে সুধাংশু নিজের একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। তিনি কাউকে পাত্তা দিতেন না। নিজের ইচ্ছা মাফিক সব করতেন। প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে কেনাকাটা সব জায়গায় নিজের লোক নিয়োগ করতেন। কেউ বাধা দিলে তাকে তার রোষানলে পড়তে হতো। সূত্র জানায়, দুদকে যেসব অভিযোগ জমা হয়েছে সেগুলো অনুসন্ধান করলে ডিজির বিরুদ্ধে আরও অনেক দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা বেরিয়ে আসবে। জানা গেছে, এর আগে করোনা পজিটিভ হওয়া সত্ত্বেও সেই তথ্য গোপন করে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ডিজি সুধাংশু শেখর ভদ্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, ডেটা কার্ড উন্মোচনের উদ্বোধনী কাজে গত ১৪ আগস্ট গণভবনে যান তিনি। তার ঠিক দুই দিন আগে ১২ আগস্ট আইইডিসিআর করোনা পরীক্ষার জন্য সুধাংশু শেখর ভদ্রের নমুনা সংগ্রহ করে এবং ১৩ আগস্ট সন্ধ্যায় তাকে করোনা পজিটিভ বলে রিপোর্ট দেয়। সূত্র জানায়, জালজালিয়াতি বন্ধে সরকার ডাকঘরকে ডিজিটাল করার অংশ হিসেবে ‘পোস্ট-ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করে। ৫৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ১৬০ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। দুদকের অনুসন্ধানে এই দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণও পাওয়া গেছে। এই প্রকল্পের বাইরে সুধাংশু শেখর ভদ্রের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নোয়াখালীর পোস্টাল অপারেটর স্থানীয় ডাকঘর থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ঢাকা পোস্ট অফিসের ফরেন শাখা থেকে অর্থ আত্মসাৎ এবং রংপুর ডাকঘর থেকে সঞ্চয়ের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা অন্যতম। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভাগীয় তদন্ত, অডিট রিপোর্ট, দুদক ও সংসদীয় কমিটির তদন্তে এসব দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে। এর বাইরে করোনা সংক্রমণের কারণে দেশ যখন সাধারণ ছুটিতে তখন ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের নামে ডিজি সুধাংশু শেখর গত এপ্রিল মাসে দ্রুত দরপত্র আহ্বান করান। প্রকল্পের পিডিরা তার কথায় সায় না দিলেও নিজের একক ক্ষমতাবলে ডিজি ইজিপিতে টেন্ডার আপলোড করান নিজের ঘনিষ্ঠ একজন প্রকৌশলীকে দিয়ে। মূল উদ্দেশ্য ছিল জুনের মধ্যে বিল পরিশোধ করার নামে অর্থ আত্মসাৎ। জানা গেছে, ডিজি তার পছন্দের এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ওই কাজ পাইয়ে দিতে ছুটিকালীন দরপত্র আহ্বান করান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর