বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আইনের আওতায় আনা হচ্ছে আরও ২০ এমপিকে

পাপুল-সেলিনা দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার আরও ২০ এমপিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান। তিনি বলেছেন, দুদকের অনুসন্ধানে থাকা এমপিদের ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ আইনের আওতায় আনা হবে।

দুদক থেকে ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা কোনো ছাড় পাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে কোনো দল-মত নেই। ব্যক্তির ঊর্ধ্বে আমরা কাজ করি। আইন আমাদের যেভাবেই নির্দেশ করে সেভাবেই আমরা কাজ করি। গতকাল কুয়েতে গ্রেফতার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

উল্লেখ্য, পাপুল ও সেলিনাসহ সাবেক ও বর্তমান ২২ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, খাস জমি দখল, ঘুষ গ্রহণ, কমিশন নেওয়া ও চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়ম?ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জন বর্তমান এবং ১০ জন সাবেক সংসদ সদস্য। সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১০ জন, বিএনপির পাঁচজন এবং অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র থেকে ছয়জন এমপি রয়েছেন। আওয়ামী লীগের তিন এমপির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামের সঙ্গে তাদের কন্যা ওয়াফা ইসলাম এবং পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের বিরুদ্ধে বুধবার মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন।

এই আসামিদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তারা আসামিদের গ্রেফতার করা প্রয়োজন মনে করলে তাদেরকে তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতার করতে পারেন। শুধু তাই নয়, মামলার তদন্তে যদি প্রয়োজন মনে হয় তাহলে কুয়েতের কারাগারে থাকা শহিদ ইসলাম পাপুলকে আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হতে পারে।

পাপুল-সেলিনা দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা : অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল কমিশনের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন এ মামলা করেন বলে সংস্থাটির পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন। মামলায় পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারে সহযোগিতা করায় পাপুল-সেলিনার মেয়ে ওয়াফা ইসলামকেও আসামি করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার দুদক মামলার অনুমোদন দেয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, জেসমিন ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া কাগুজে প্রতিষ্ঠানের আড়ালে তিনি পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। মামলায় জেসমিনের বিষয়ে বলা হয়, তিনি শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় বোন সেলিনা ও দুলাভাই পাপুলের অবৈধ অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বৈধতায় রূপ দিতে লিলাবালি নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

বিভিন্ন ব্যাংকে তার প্রায় ৪৪টি হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেই রয়েছে ৩৪টি এফডিআর হিসাব। আসামি শহিদ ইসলাম পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন বলে এ সুবিধা নিতে তার কোনো বেগ পেতে হয়নি। জানা গেছে, কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এর আগে ২২ জুন একই অভিযোগে দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সব হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় দুদক।

১৭ জুন পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে দুদক নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাশাপাশি পাপুল দেশে ফিরলে আর যেন বিদেশে যেতে না পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি পাঠায় কমিশন। জনশক্তি রপ্তানিকারক পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সে দেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনাকে এমপি করে আনেন। প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে। কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্তে নামে দুদক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর