শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ৩৪ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ

আলী আজম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে ফিরে

চট্টগ্রামে ৩৪ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে গতকাল আত্মসমর্পণ করে জলদস্যুরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে কোনো দস্যুকে আস্তানা গড়তে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল দুপুরে র‌্যাব-৭-এর আয়োজনে বাঁশখালী ও মহেশখালীর ৩৪ জলদস্যুর অস্ত্র, গুলিসহ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আত্মসমর্পণকারীরা বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে থাকবে। তাদের সব ধরনের সুযোগ করে দেওয়া হবে। ভুল স্বীকার করে যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তাদের অনুদান দেওয়া হবে। জলদস্যু, বনদস্যুদের কঠোর পরিণতিতে না গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আমরা সফল হয়েছি। জলদস্যু, বনদস্যুসহ উপকূল এলাকায় সন্ত্রাস দমনে র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষতায়, সক্ষমতায় পরিপক্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপকূল এলাকার নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে যে কোনো উপায়ে সন্ত্রাস দমন করা হবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বিদ্যমান অপরাধীদের সব অপরাধ থেকে বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার আহ্বান জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, অপরাধীদের জীবন সব সময় অন্ধকার জীবন। মানুষ তাদের ভালো চোখে দেখে না। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে অপরাধ করে পালাতে পারবেন না। অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসুন, পুনর্বাসন করা হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আত্মসমর্পণ করতে এসেছেন তাদের প্রত্যেককে সরকারিভাবে অনুদান দেওয়া হবে। আর যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেননি তারা সময় থাকতে আইনের আওতায় চলে আসুন। না হয় পরিণতি ভালো হবে না। এ দেশে চোর-ডাকাতের স্থান হবে না। সুন্দরবনে বর্তমানে ২৫ লাখ মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। অনুষ্ঠানে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার বলেন, এখনো বঙ্গোপসাগরে কিছু দল সক্রিয়। এদের আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয় ভয়াবহ পরিস্থিতির কবলে পড়তে হতে পারে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সুন্দরবনের মতো চট্টগ্রামের বাঁশখালী, মহেশখালী ও কুতুবদিয়াও জলদস্যুমুক্ত হতে যাচ্ছে। আত্মসমর্পণ করা এ ৩৪ জলদস্যুর হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্যান্য মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রত্যাহার করা হবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ র‌্যাব কর্মকর্তাদের কাছে ৯০টি অস্ত্র এবং ২ হাজার ৫৬ রাউন্ড গুলি বুঝিয়ে দিয়ে জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেন। তাদের প্রত্যেককে অনুদান হিসেবে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর একই এলাকায় ৪৩ জলদস্যু র‌্যাবের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আত্মসমর্পণ করা ৩৪ জলদস্যুর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ছয়জন আছেন। যারা বিভিন্ন সময়ে ডাকাতি, অস্ত্রকারবারি, ছিনতাই ও জলদস্যুতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছুদিন মাঠপর্যায়ে কাজ করে র‌্যাব। র‌্যাব সদর দফতরসূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ১ নভেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যুবাহিনীর ৩২৮ সদস্য ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেন।

এখন তারা মাছের ঘের, কাঁকড়া চাষসহ নানা পেশায় নিয়োজিত। পুনর্বাসনের জন্য তাদের প্রত্যেককে নগদ ১ লাখ টাকা ও আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর র‌্যাবের মাধ্যমে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেন। সে সময় অনেকেই নাগালের বাইরে ছিলেন। তাই সম্প্রতি বিভিন্ন পাহাড় ও সাগর উপকূলে অভিযান বৃদ্ধি করে র‌্যাব। অভিযানের মুখে আত্মসমর্পণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এ ৩৪ জলদস্যু। অনুষ্ঠানে বাইশ্যা ডাকাত বাহিনীর প্রধান আবদুল হাকিম ওরফে বাইশ্যা ডাকাত বলেন, ‘আমি ভালো মানুষের ছেলে ছিলাম। খারাপ মানুষের সঙ্গে ভিড়ে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়েছি। মানুষ আমাদের ঘৃণা করে। আমার ছেলেমেয়ে বাজারে গেলে সাধারণ মানুষ তাদেরও আমার কারণে ঘৃণা করত। আমি এত দিন অন্যায় পথে ছিলাম। আমরা ভুল বুঝতে পেরেছি।’ যারা আত্মসমর্পণ করেননি, তাদের এ পথ থেকে ফিরে আসারও আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর