শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
অ্যারিজোনায় বাইডেন জয়ী

ট্রাম্পের আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র হুমকির মুখে

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র হুমকির মুখে

৩ নভেম্বরের নির্বাচনটি ছিল আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ এবং ভোট গ্রহণ/গণনায় ত্রুটি অথবা কারচুপির কোনো ঘটনা ছিল বলে প্রমাণও পাওয়া যায়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে সাইবার সিকিউরিটি এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সির (সিআইএসএ) শীর্ষ কর্মকর্তাসহ নির্বাচন কমিশনের পদস্থ কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, ভোট নিয়ে কারচুপি অথবা জালভোট কিংবা গণনায় কোনো ত্রুটির অবকাশ ছিল না। সবকিছু যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে ট্রাম্পের বিজয়কে ছিনতাইয়ের অভিযোগও সঠিক নয়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে তারই প্রশাসনের শীর্ষকর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার প্রদত্ত এই বিবৃতিতে আরও বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভোট গ্রহণের পদ্ধতিতে কোনো হেরফের ঘটেনি বা ব্যালট গায়েব করাও সম্ভব ছিল না। অথবা ব্যালট পাল্টিয়ে কোনো প্রার্থীর পরাজয়ে ভূমিকা রাখাও সম্ভব ছিল না। এতে তারা উল্লেখ করেন, ‘বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার যে আশঙ্কা ছিল অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব মহল সজাগ ছিলেন এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর ছিলাম সবাই। সে আলোকেই আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে না।’

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে সাইবার সিকিউরিটি এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সির উপ-পরিচালক ব্রায়ান ওয়্যার পদত্যাগপত্র সাবমিটের পরই অপর কর্মকর্তারা এই বিবৃতি প্রদান করেন। জানা গেছে, পোস্টাল ব্যালটে ব্যাপক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে এবং সেই ব্যালটের গণনার পরই ট্রাম্প পরাস্ত হয়েছেন বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে অভিযোগ করছেন- তারই পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র সাইবার সিকিউরিটি কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধচিত্তে এই বিবৃতির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেন। শিগগিরই ট্রাম্প তাদের বরখাস্ত করতে পারেন আশঙ্কা থেকে তারা সবাইকে সঠিক তথ্য জানালেন। এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টফার র‌্যা, সিআইএসএ পরিচালক ক্রিস্টফার সি ক্রেবসকেও বরখাস্তের তালিকায় রাখা হয়েছিল। কারণ তারা কেউই ট্রাম্পের উদ্ভট অভিযোগে সায় দেননি। ট্রাম্পের দাবি, পোস্টাল ব্যালটে ডেমোক্র্যাটরা কারচুপি করেছে। এদিকে ভোট গ্রহণের পর ১০ দিন অতিবাহিত হলো, তবুও ট্রাম্প ফলাফল মেনে নিয়ে জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানাননি। অধিকন্তু প্রতিদিনই ভোট জালিয়াতি আর কারচুপির অভিযোগ করছেন। মামলা করেছেন বেশ কটি স্টেটে। সেগুলোর অধিকাংশই আদালত কর্তৃক নাকচ হয়ে গেছে। অবশ্য জর্জিয়া স্টেটের ভোট পুনরায় গণনা করা হচ্ছে ট্রাম্পের আবেদনে।

অপরদিকে ভোটে বিজয়ী জো বাইডেনের ট্যানজিশন টিমকে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা যাতে কোনো ধরনের  সহায়তা না দেয়- সে নির্দেশ জারি করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা বাইডেনকে অভিনন্দন বার্তা পাঠাচ্ছেন-সেগুলোও স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে যথাযথভাবে বাইডেন টিমকে দেওয়া হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের হার পুনরায় উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের স্বার্থেই ট্যানজিশন টিমকে সর্বাত্মক সহায়তা জরুরি বলে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষস্থানীয় সিনেটররাও বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, মামলার ফলাফল অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। তার আগে বাইডেন টিমকে সহযোগিতা করা উচিত। এটি গণতান্ত্রিক রীতি এবং তা মেনে চলা উচিত সবারই। ক্যাপিটল হিলে রিপাবলিকান সিনেটরদের অধিকাংশই বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কা নিয়ে কোনো গোপনবার্তা/আভাস গোয়েন্দাদের কাছে থাকলে সেটি বাইডেন টিমের জানা জরুরি।

আর এভাবেই বাইডেন যে ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তারও ইঙ্গিত এলো রিপাবলিকান সিনেটরদের মধ্য থেকেও। সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষস্থানীয়দের অন্যতম মিজৌরির সিনেটর রয় ব্লান্ট বাইডেন টিমকে বলেন, ‘তারা সবকিছু জানতে হবে এটি আমি মনে করি না। তবে কিছু বিষয় তারা জানা উচিত। এর মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়টি অন্যতম।’ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলসি বলেন, ‘রিপাবলিকান পার্টির লোকজন জনরায়কে সম্মান না জানানোর পন্থা অবলম্বন করেছেন, যা গোটা জাতির জন্যই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। এমন পরিস্থিতিতে আমি বলতে চাই যে, আগুনে পুড়ছে গোটা বাড়ি, চেয়ে চেয়ে দেখছি, পানি ঢেলে কেউ নেভানোর চেষ্টা করছি না।’

ট্রাম্পের স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন টিমের ৫ শতাধিক সদস্য সংবিধান রীতি অনুসরণে সক্ষম হচ্ছেন না। তারা প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে সক্ষম হচ্ছেন না। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ দফতরসমূহের ফাইল কিংবা যোগাযোগের নথি, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সভা-সমিতি, ফোনে কথাবার্তার সূত্র জানতে পারছেন না। এ অবস্থায় ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর চলমান প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। অর্থাৎ সর্বত্র নাজুক অবস্থা তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে আর কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সিনেটে ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান (রিপাবলিকান) আইওয়ার সিনেটর চার্লস ই গ্র্যাসলি বলেছেন, জনতার রায়ের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। ১৩ ডিসেম্বর ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিনিধিগণ ভোট দেবেন প্রেসিডেন্টকে। তার আগেই বাইডেনকে অভিনন্দন জানালে ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ভালো হবে বলে মন্তব্য করেছেন এই সিনেটর।

অ্যারিজোনায় বাইডেন বিজয়ী : এদিকে অ্যারিজোনা স্টেটে ভোট গণনা শেষে বৃহস্পতিবার জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এ স্টেটে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের পর অ্যারিজোনা স্টেটে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বিল ক্লিনটন জয়ী হয়েছিলেন। এবার জিতলেন বাইডেন। অন্য সব নির্বাচনে রিপাবলিকানরাই এখানে জয়ী হতেন। কিন্তু এবার রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত অ্যারিজোনাও হারাল ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি। সেখানে ইলেকটোরাল ভোট ১১। ভোট বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন ভোটার এবং ল্যাটিনো ভোটাররা বাইডেনকে বিজয়ী করতে সহায়তা করেছেন। এ নিয়ে বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোট হলো ২৯০। বিজয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭০টির। নর্থ ক্যারলিনা এবং জর্জিয়া স্টেটের ভোট গণনা চলছে। সে দুটিতে ট্রাম্প জয়ী হলেও বাইডেনের পরাজয় ঠেকানো সম্ভব হবে না। বর্তমানে ট্রাম্পের ইলেকটোরাল ভোট ২১৭।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর