রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে আরও মামলা, গ্রেফতার

রাজধানীতে বাসে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বেড়েছে মামলা। একই সঙ্গে বেড়েছে গ্রেফতারের সংখ্যা। গতকাল রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ১৬টি এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৬ জনকে। বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ পল্টন থানায় আরও একটি মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরকারি গাড়ি ও গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। কয়েকটি ঘটনায় বাসের পেছনের অংশে গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগানোর আলামত মিলেছে। এতে পরিবহন শ্রমিক ও ভাড়াটে লোকজন জড়িত বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) শাহ আবিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১৬ মামলায় ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই একটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। নাশকতার ঘটনায় ভাড়াটে অপরাধীরা অংশ নেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নাশকতাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে বের করা হচ্ছে কারা কেন এ নাশকতা চালিয়েছে।

ডিএমপির সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার তুরাগ থানায় ককটেল উদ্ধারের মামলায় সোহেল মিয়া নামে এক আসামিকে আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল জানান, নির্বাচনের দুই দিন আগে থেকে স্থানীয় বিএনপি কর্মী সুমন তাকে ভোট কেন্দ্রে ককটেল নিক্ষেপ করতে বলেন। এ কাজের জন্য তাকে ২০০ টাকা অগ্রিমও দেন সুমন।

পল্টনে আয়কর বিভাগের গাড়িতে আগুনের ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ধরে তদন্তে দেখা গেছে, অগ্নিসংযোগকারীরা যুবদলের মিছিল থেকেই এসেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের নামে ভাইরাল হওয়া একটি ফোনালাপ থেকেও যুবদল কর্মীদের অগ্নিসংযোগের তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিএনপির কর্মীদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ায় মামলা দায়েরের পর কারা, কীভাবে আগুন ধরিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। কয়েকটি ঘটনায় বাসের পেছনের অংশে গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগানোর আলামত মিলেছে। এতে পরিবহন শ্রমিক ও ভাড়াটে লোকজন জড়িত। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর নাশকতার মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের দিন পল্টনের বিএনপির অফিসের কাছে, মতিঝিল, গুলিস্তান, শাহবাগ, সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেট, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, শাহজাহানপুর, ভাটারা এবং উত্তরার আজমপুরে ১১টি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

সূত্র মতে, বৃহস্পতিবারই পল্টনে একটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজ জব্দ করে পুলিশ। ওই ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক যাচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে দুজন গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। শুক্রবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন পরিচয়ে দুজনের একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ফোনালাপের একটি অংশে নারীকণ্ঠ বলেন, ‘স্টাফ...পুলিশের স্টাফ গাড়ি থাকে না? এগুলোর মধ্যে আগুন দিছে যুবদলের ছেলেরা।’ এই অডিওর ওপর ভিত্তি করে পুলিশ যুবদলের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে সন্দেহ করছে। প্রতিটি ঘটনায় বিএনপির নেতাদের হুকুমের আসামি করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য ও আলামত পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অগ্নিসংযোগের শিকার বাসগুলোতে ৩ থেকে ১২ জন যাত্রী ছিলেন। বাসের দরজায় থাকা হেলপাররা আগেই সটকে পড়েন। এসব ঘটনায় ভাড়াটে অপরাধী ও শ্রমিকদের ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। অগ্নিসংযোগকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

সর্বশেষ খবর