রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

হেফাজতের নেতৃত্ব নিয়ে উত্তেজনা

আমির বাবুনগরী, কে হচ্ছেন মহাসচিব, আজ সম্মেলন ঠেকাতে মাঠে শফী অনুসারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা ও চট্টগ্রাম

আলোচিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিল আজ। এই অরাজনৈতিক সংগঠনের সদ্য প্রয়াত আমির আল্লামা শফীর উত্তরসূরি হতে চলেছেন বর্তমান মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। একাধিক নেতার নাম আলোচনায় থাকলেও শেষ মুহূর্তে মহাসচিব হতে পারেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। এদিকে আজকের কাউন্সিল ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন আল্লামা শফী অনুসারী নেতারা। তারা কাউন্সিল বন্ধের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘কথিত কাউন্সিলে সিংহভাগ ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামকে বিএনপি-জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ কাউন্সিল বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’

সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘কাউন্সিলে উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। রবিবার (আজ) যথাসময়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।’

জানা যায়, হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফী পরবর্তী নেতা নির্বাচনে শূরা কমিটির সদস্যরা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় বসছেন। ওই বৈঠকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগঠনের তিন শতাধিক নেতার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। শীর্ষ নেতারা আলোচনার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম আমির ও নতুন কমিটি নির্ধারণ করবেন। আল্লামা শফীর উত্তসূরি হিসেবে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আমির হচ্ছেন তা এক প্রকার নিশ্চিত। মহাসচিব হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন চারজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- হেফাজতে ইসলামের বর্তমান যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, ঢাকা খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম নুরুল ইসলাম জিহাদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের একাংশের সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। তবে শেষ মুহূর্তে মহাসচিব পদ পেতে পারেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন আল্লামা আহমদ শফী অনুসারী হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু নেতা। পক্ষান্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী অনুসারী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা জাকারিয়া নোমানী ও মাওলানা মীর ইদ্রিস।

আল্লামা শফীপন্থিদের সংবাদ সম্মেলন : হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল বন্ধ ও আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে হেফাজতে ইসলামের একটি অংশ। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন দাবি করেন- সুপরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যা করেছে। শফী হুজুর স্বাধীনতার পক্ষে থাকার কারণে তার এ পরিণতি হয়েছে। তাই আমরা হুজুরের স্ত্রী ফিরোজা বেগম ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচারের দাবি জানাই। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, হুজুরের হত্যার বিচার দাবি না তুলে ১৫ নভেম্বর কাউন্সিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে হুজুরের গড়া সংগঠনকে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অবিলম্বে এ সম্মেলন বন্ধ করতে হবে।

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন : এদিকে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে মহল বিশেষের ষড়যন্ত্র উন্মোচনে গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংগঠনের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত করে যারা হেফাজতকে একটি চিহ্নিত মহলের ক্রীড়নকে পরিণত করতে চাচ্ছে, অচিরেই জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, হেফাজতের মূলধারাকে বাদ দিয়ে হেফাজতের একজন পদত্যাগী নেতার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এই ইমানি সংগঠনকে দ্বিখন্ডিত করার ষড়যন্ত্র করছে। এ দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ বিশেষত উলামায়ে কেরাম তা কোনো দিনই মেনে নেবে না। আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর এই আমানত রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে সবকিছু উৎসর্গ করতে তারা প্রস্তুত রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জিয়াউল হক মজুমদার, মাওলানা আলতাফ হোসাইন, মাওলানা মুজিবুর রহমান, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক, মুফতি নাসির উদ্দিন কাসেমী, মাওলানা রেদওয়ানুল বারী সিরাজী, মাওলানা আতাউর রহমান খান, মাওলানা মনজুর মুজিব, মুফতি মুনসরুল হক, মাওলানা আবদুল্লাহ ইদ্রিস, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা জাকির হোসাইনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।

সর্বশেষ খবর