রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রিমান্ডে অসুস্থ দাবি আকবরের, হাসপাতাল জানাল সুস্থ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটে বন্দরবাজার পুলিশফাঁড়িতে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া রিমান্ডে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ করে আকবরকে সুস্থ বলে উল্লেখ করেন। এরপর ফের রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয় আকবরকে। এদিকে আলামত নষ্টকারী ও শেল্টারদাতা পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার দাবি করে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। জানা গেছে, ৯ নভেম্বর সিলেটের সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে। পরদিন আদালতে হাজির করে তার রিমান্ডের আবেদন জানায় পিবিআই। শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বর্তমানে পিবিআইর অধীনে রিমান্ডে আছেন আকবর। শুক্রবার সন্ধ্যার পর তিনি ‘অসুস্থ হয়ে পড়লে’ রাত ৯টার দিকে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যায় পিবিআই। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা আকবরের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। চিকিৎসকরা পিবিআইকে জানান, আকবর সুস্থ আছেন। এরপর পিবিআই রাতেই আকবরকে রিমান্ডে নিয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক আওলাদ হোসেন বলেন, রিমান্ড চলাকালে শুক্রবার রাতে অসুস্থতার কথা জানান আকবর। এরপর রাত ৯টার দিকে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাকে সুস্থ ঘোষণা করলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুনরায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

রায়হানের মায়ের সংবাদ সম্মেলন : পুলিশফাঁড়িতে নির্যাতনের পর আলামত নষ্ট করতে পাল্টে ফেলা হয় রায়হান আহমদের পরনের কাপড়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার পরনে নীল রঙের টিশার্ট ও প্যান্ট ছিল। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর তার পরনে দেখা গেছে লাল রঙের শার্ট। পাল্টে ফেলা হয় প্যান্টও। নিজের শরীরের চেয়ে অনেক ছোট একটি প্যান্ট ছিল রায়হানের পরনে। রায়হান হত্যার আলামত নষ্ট করতেই তার পরনের কাপড় পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার মা সালমা বেগম। গতকাল দুপুরে নগরীর নেহারীপাড়ার বাসায় বৃহত্তর আখালিয়া সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এমন অভিযোগ করেন রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, ‘রায়হানের কাপড় কারা, কেন পরিবর্তন করল? এর সঙ্গে কারা জড়িত? মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এগুলো চিহ্নিত হওয়া দরকার। আটকের পর আকবর পলায়নে সহায়তা ও পরামর্শদাতা হিসেবে একজন সিনিয়র অফিসারের কথা বলেছে। সেই সিনিয়র অফিসার কে? পরনের কাপড় পরিবর্তন করে আলামত নষ্টকারী ও পালাতে সহায়তাকারী সিনিয়র অফিসারের পরিচয় শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করা উচিত। রায়হান হত্যায় জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে রায়হানের মা বলেন, ‘হত্যা মামলায় এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ইতিমধ্যে গ্রেফতার হওয়া চার পুলিশ সদস্যের কেউই আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়নি। এতে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’

সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর আখালিয়া সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের আহ্বায়ক সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘রায়হান হত্যার ঘটনায় আসামিরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি না দিলেও প্রত্যক্ষদর্শী তিন পুলিশ সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, যে কারণে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

প্রসঙ্গত, ১০ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশফাঁড়িতে ধরে নেওয়া হয় নগরীর নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে। পরদিন ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী। পরিবারের পক্ষ থেকে ফাঁড়িতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগে রায়হানের স্ত্রী হত্যা এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন।

সর্বশেষ খবর