শিরোনাম
সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব সেদিন জীবন সার্থক হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

যেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব সেদিন জীবন সার্থক হবে

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন যেদিন পূরণ করতে পারব, সেদিন আমার জীবন সার্থক হবে।

‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে গতকাল জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনীত প্রস্তাব অনুযায়ী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

গত ৯ নভেম্বর ১৪৭ বিধিতে উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর ৭৯ জন সংসদ সদস্য ১৯ ঘণ্টা ৩ মিনিট আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সংসদে ১৯৭২ সালের দেওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি শোনানো হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় এবং বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনীত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

আলোচনায় অংশ নেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, সংসদের বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, ইমাজ উদ্দীন প্রামাণিক, অধ্যাপক আলী আশরাফ, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান প্রমুখ।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন উন্নয়নটা যেন একেবারে তৃণমূল থেকে হয়। এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানো ছিল তাঁর লক্ষ্য। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের সংশোধনী এনে জাতির পিতা বলেছিলেন, এটাও গণতন্ত্র। তবে সেটা শোষিতের গণতন্ত্র। এজন্য তিনি গভর্নরদের সম্মেলনে বলেছিলেন, দুর্নীতি ঘুষ মুনাফাখোরির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি উন্নয়নের জন্য পাঁচ বছরের যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন, তা যদি তিনি বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশ আজ উন্নত দেশ থাকত। তিনি বলেন, আজ আমরা জাতির পিতার জীবনী নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু যে কাজটা তিনি করে যেতে চেয়েছিলেন, সেটা তিনি করে যেতে পারেননি। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, তার ফলাফলটা কী, আজকে স্বাধীনতার ৪৯ বছর এখনো বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়াচ্ছে? এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, আওয়ামী লীগ সরকার আসতে পেরেছিল বলেই কিন্তু যতটুকু উন্নতি করতে  পেরেছি। এর বাইরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তো দেশের উন্নতি করেনি, মানুষের উন্নতি করেনি। করার ইচ্ছাও ছিল না এবং জানতও না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তো সারা বাংলাদেশ ঘুরেছেন, চষে বেড়িয়েছেন, বাংলাদেশকে তিনি চিনতেন, জানতেন। মানুষের কষ্ট তিনি জানতেন। আর সেটা জানতেন বলেই এ দেশের ভাগ্যটা কীভাবে পরিবর্তন হবে সে বিষয়ে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন এবং সেভাবেই তিনি কাজ করতে চেয়েছিলেন। আমরা যখনই সরকারে এসেছি সবসময় সেই চেষ্টাই করেছি, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন সেটাও যেন সম্পন্ন করতে পারি। এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র চিন্তা। আমরা সেটা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জাতির পিতা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা যেন করে যেতে পারি দেশবাসীর কাছে সে দোয়া চাই।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, সব বাধা অতিক্রম করে যখন  দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নতুন আপদ এলো করোনাভাইরাস। এই করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের সব প্রচেষ্টা কিছুটা ব্যাহত হলো।  সেটাও মোকাবিলা করে চলছি। তার ওপর করোনাভাইরাস যখন চলছিল এলো ঘূর্ণিঝড়, তারপর বন্যা। এসব মোকাবিলা করে আমরা যখন এগিয়ে চলেছি, এরই মধ্যে কোনো কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস। কেন? কী স্বার্থে? কীসের জন্য? তিনি বলেন, নির্বাচন হয় নির্বাচনে অংশপ্রহণ করার নামে, অংশগ্রহণ করে টাকা-পয়সা যা পকেটে নিয়ে রাখে, নির্বাচনের দিন নির্বাচনও করে না, এজেন্টও দেয় না। কিছুই করে না। অমনি মাঝপথে ইলেকশন বয়কট নাম দিয়ে এরপর বাসে আগুন দিয়ে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নতি করবেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নটাই ছিল তার লক্ষ্য। তিনি পাঁচ বছরের জন্য পরিকল্পনা ঘোষণা করলেন। যখন এই পদক্ষেপটা নেন, অনেকের এটা নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা শুরু হয়েছিল। এক উল্টো ব্যাখ্যা দিয়ে সেটাকে নস্যাৎ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, একদিকে বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন। উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছিলেন। তখন তারা এক দিন নেমেই গেল তার বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, মানুষের বিরুদ্ধে। তারা কারা? কেন? তারা পাকিস্তানি প্রভুদের দাসত্বকে ভুলতে পারেনি। তারা সেই দাসত্বটাই চেয়েছিল, স্বাধীনতা নয়। কিন্তু আপামর জনসাধারণ, তারা তো জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। সেই স্বাধীনতার সুফলটা এ দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানো সেটাই তিনি চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা আমাদের নির্বাচনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। তিনি তার ভাষণে বলেছিলেন, আমি যাকে নমিনেশন দিয়ে দেব সে জিতে আসবে। যে মানুষটা সত্যিকার মানুষের দরদি সে তো কখনো ইলেকশনে জিতে আসতে পারবে না। তাহলে একটা সিস্টেম তিনি করেছিলেন প্রার্থী কারা হবে একজন দুজন তিনজন চারজন যেই প্রার্থী হোক তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে সেই চারজনের মধ্য থেকে জনগণ যাকে আপন মনে করবে যাকে দিয়ে কাজ হবে তাকে বেছে নেবে। দুটো ইলেকশন হয়েছিল। একটা কিশোরগঞ্জে আর একটা বোধ হয় পটুয়াখালীতে। সেখানে একজন স্কুলশিক্ষক কিন্তু জিতে আসে। উনার যে স্বপ্নটা ছিল সেটাই দেখা গেল সামান্য একজন স্কুলশিক্ষক  সে জিতে এলো। টাকা নাই পয়সা নাই। কিন্তু যেহেতু জনগণের আস্থা ভরসা তার ওপরে, কাজেই সে জিততে পারে। তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে ১৯৭৫-এর পরে যারা ক্ষমতা দখল করেছে তারা তো নির্বাচন প্রহসন করে করে সিস্টেমটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যে একটা সিস্টেমে নিয়ে আসতে। গণতন্ত্রকে সুসংহত করা, শোষিতের গণতন্ত্র কায়েম করা, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য।

আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে কোস্টগার্ডকে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে আরও বৃহৎ পরিসরে দায়িত্ব পালনে সক্ষম একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রনির্ভর অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল ও নিরাপদ রাখা, ‘ব্লু-ইকোনমি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহ ও ব্যক্তিবর্গের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে আজকের কমিশনকৃত জাহাজসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গতকাল সকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের দুটি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল, ৫টি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল, দুটি ফাস্ট প্যাট্রোল বোট এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বেইস, ভোলার কমিশনিং প্রদান কালে দেওয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে মূল অনুষ্ঠানস্থল চট্টগ্রামের কোস্টগার্ড বার্থ পতেঙ্গার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। খবর বাসস। প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ডের একটি সুসজ্জিত চৌকশ             দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. আশরাফুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে অধিনায়কগণের হাতে ‘কমিশনিং ফরমান’ হস্তান্তর করেন। নব্য কমিশনিংকৃত ৯টি জাহাজের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তুলতে আমরা কোস্ট গার্ডকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা এবং সামুদ্রিক জলসীমার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, দেশের সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযান, ডাকাত দমনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় কোস্ট গার্ডের ভূমিকা উত্তরোত্তর বাড়ছে। ‘জাটকা নিধন রোধে এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিববর্ষে কোস্ট গার্ডের বহরে এই নৌযানগুলো যুক্ত হওয়া সংস্থাটির জন্য একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে। কারণ, উপকূলীয় অঞ্চল টহলে রাখাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তাঁর সরকারের সময়ে কোস্ট গার্ডের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত প্রায় ১২ বছরে কোস্ট গার্ডে’র জন্য বিভিন্ন আকারের ৫৫টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ করা হয়েছে। তিনটি প্রকল্পের আওতায় কোস্ট গার্ডের বেইসসমূহের কর্মকর্তা ও নাবিকদের বাসস্থান, অফিসার্স মেস, নাবিক নিবাস ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস ‘বিসিজি বেইস অগ্রযাত্রার’ মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

 তিনি বলেন, ‘এ বাহিনীর সদস্যরা স্বল্পতম সময়ে সুবিশাল সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে।’ তিনি কোস্ট গার্ড সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, কোস্ট গার্ডের বিভিন্ন জাহাজ ও ঘাঁটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে এ বাহিনীর সক্ষমতা আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, এসব জাহাজ ও ঘাঁটি কোস্ট গার্ড সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষ, মানসিক বিকাশ ও উন্নত মনোবল অর্জনে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে।’ তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, দেশপ্রেম, সততা ও ইমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন, কোস্ট গার্ডের সুনাম যেন সব সময় বজায় থাকে  সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। এই বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং আপনাদের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা সরকার দিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশীয় শিপইয়ার্ডে তৈরি এ জাহাজগুলো কোস্ট গার্ডের অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পাশাপাশি, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ও নদী পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিসিজি বেইস ভোলারও আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলেও জাতীয় সংসদে তাদের আনীত বিলের কারণেই ‘কোস্ট গার্ড’ একটি বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।  তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সৃষ্টির পেছনে একটি মজার ঘটনা রয়েছে। তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল এবং জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আকারে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সৃষ্টির প্রস্তাব উত্থাপন করে। ইতিপূর্বে আনীত অন্যান্য সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের মতো এটিরও বিরোধিতা করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তা বাতিল করে দিতে চেয়েছিল বিএনপি। একটি পর্যায়ে আমরা দেখলাম সংসদে বিরোধী দলে থাকলেও সংসদে আমাদের উপস্থিতি বেশি ছিল এবং সরকারি দল বিএনপির সদস্যদের উপস্থিতির সংখ্যা খুব কম ছিল। বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় এবং বিতর্কের একটা পর্যায়ে সরকারি দল যখন এটাকে কণ্ঠভোটে নাকচ করে দিতে চাইল সঙ্গে সঙ্গে আমরা ডিভিশন ভোট দাবি করলাম। তিনি বলেন, এখানে সংসদীয় গণতন্ত্র অনুশীলনের যে ব্যাপারটি রয়েছে তা হচ্ছে, আমরা তখন তাৎক্ষণিকভাবে ডিভিশন ভোট দাবি না করলে তা নাকচ হয়ে যেতে পারত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের দাবি মোতাবেক জাতীয় সংসদের স্পিকার তখন ডিভিশন ভোট করলে, ভোট গুনে দেখা গেল তাদের দলের সংসদ সদস্যই বেশি, কাজেই তাদের আনীত সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি পাস হলো। তিনি বলেন, উপকূলীয় নিরাপত্তায় আমাদের আনীত প্রস্তাবটি বিরোধী দলে থেকেও পাস করিয়ে আনাটা ছিল একটা বিরল ঘটনা। কিন্তু আমরা সেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলাম ১৯৯৪ সালে। সেখান থেকেই এই কোস্ট গার্ড সৃষ্টি। পরবর্তীতে তা আইনও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক কারণে দুর্যোগের সঙ্গে বসবাসরত এবং মানুষের জানমাল রক্ষার্থে তাঁর সরকার  কোস্ট গার্ড বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য হোভারক্রাফট, ড্রোন ও সব আবহাওয়ায় চলাচলের উপযোগী ৩ হাজার ৫০০ টন ক্ষমতা বিশিষ্ট জাহাজ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুর্যোগের সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে এবং সেই প্রস্তুতিও আমাদের থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়াও বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে দুটি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল, একটি ফ্লোটিং ক্রেন, দুটি টাগ বোট এবং ১৬টি বোট তৈরি হচ্ছে। অচিরেই এগুলো কোস্ট গার্ডের বহরে সংযুক্ত হবে। কোস্ট গার্ডের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ডও নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে কোস্ট গার্ডের জনবলও বৃদ্ধি করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্লু-ইকোনমি’ ও গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর রূপকল্প-২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী বর্তমান জনবল ৪ হাজার ৭৮১ জন থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর