শিরোনাম
সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চলে গেলেন ফেলুদা

ফরিদুর রেজা সাগর

হ্যাঁ- শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন বাঙালির প্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি আমাদের ফেলুদা। বিশ্ববরেণ্য সত্যজিৎ রায়ের ফিল্মের তিনিই একমাত্র নাম-ভূমিকার অভিনেতা। আমরা কিশোরবেলায় যখন শুনলাম, ফেলুদা চরিত্রে সৌমিত্র অভিনয় করবেন তখন খুব অবাক হলাম। তার আগে আমরা দেখেছি, অশনি সংকেতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়। ফেলুদার বয়স ২৫ বছর। সৌমিত্রকে কি এই চরিত্রে মানাবে? কিন্তু যখন ‘সোনার কেল্লা’ দেখলাম- তখন বুঝতে পারলাম শক্তিমান অভিনেতা যে কোনো চরিত্রেই নিজেকে মানিয়ে নেন।

কত বিচিত্র চরিত্রেই না তিনি অভিনয় করেছেন। ‘সাত পাকে বাঁধা’ কিংবা দেবদাসের চূনীলাল চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় বাঙালি দর্শক চিরদিন মনে রাখবে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর পরিণত বয়সে এক তরুণ খ্যাতিমান নির্মাতা শিবপ্রসাদ রায়ের ‘বেলাশেষে’-তে অবিশ্বাস্য অভিনয় করেছেন। কলকাতা গিয়ে সেই সিনেমা আমরা সবাই মিলে উপভোগ করেছি।

একটা স্মৃতিময় ঘটনা খুব মনে পড়ছে। পীর হাবিবুর রহমানের অনলাইন একটা পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সৌমিত্র ঢাকায় এলেন। তাকে আমন্ত্রণ জানালাম চ্যানেল আইতে। কিন্তু তাঁর হাতে সময় নেই। তবে তিনি এয়ারপোর্টে যাওয়ার আগে ঘণ্টা দুই সময় দেবেন। কোথায় যাওয়া যায়? আমীরুল বলল, চলেন লা মেরিডিয়ানে যাই। ওখান থেকে এয়ারপোর্ট খুব কাছে। আমীরুল আরও বলল, ফেলুদার পাশাপাশি আমাদের ছোটকাকুকেও আমন্ত্রণ জানাই। ছোটকাকু মানে আমাদের প্রিয় অভিনেতা আফজাল হোসেন। সৌমিত্র-ভক্ত রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শহিদুল আলম সাচ্চু, আনন্দ-আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান, উদ্যোক্তা সানাউল আরেফিন, সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান প্রমুখ মিলে দুপুরের মনোরম আড্ডা জমে উঠল। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় গল্পচ্ছলে নানা ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে কথা বললেন। মেয়ের কঠিন শাসনে তাঁর প্রতিদিন কাটে। সামান্য মাংস মুখে দিয়ে বললেন, এখন তো মেয়ে নেই সামনে। তাই একটু খেয়ে নিই। এমনই আন্তরিক তিনি। রেজানুর তার ফটোগ্রাফার দিয়ে অনেক ছবি তুলল। ফেলুদা আর ছোটকাকুর একসঙ্গে অনেক ছবি তোলা হলো। সৌমিত্র শিশুর মতো সরল। তিনি সবার আবদার রক্ষা করলেন।  আমি বাংলা চলচ্চিত্রের এই শক্তিমান অভিনেতার দিকে তাকিয়ে রইলাম মুগ্ধ হয়ে। আমার মুখে কথা নেই। তিনি সত্যজিৎ রায়ের ফিল্মের প্রধান অভিনেতা। চারুলতা, অপুর সংসার, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া অনেক জনপ্রিয় গানে তিনি কণ্ঠ মিলিয়েছেন। মঞ্চে তিনি অবিসংবাদিত অভিনেতা। কবিতা লিখতেন। ‘এক্ষণ’ এর মতো গৌরবময় সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এক আশ্চর্য প্রতিভা তিনি। বন্যা আর আফজালকে বললেন, আবার আসব বাংলাদেশে। তোমাদের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা হবে। আরও বললেন, বন্যা আজ তো শোনা হলো মাত্র একটি গান। এরপর এসে তোমার অনেক গান শুনব। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আমার ধারণা, তাঁর কানে হয়তো বাজছে- বন্যার কণ্ঠে গাওয়া, তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে!

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর