বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
এএসপি আনিসুল করিম হত্যা

মানসিক হাসপাতালের রেজিস্ট্রার রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিনিয়র এএসপি মো. আনিসুল করিম শিপন হত্যা মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এ নিয়ে এএসপি শিপন হত্যার ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এর আগে, গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-এডিকশন হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে কর্মচারীদের মারধরের শিকার হয়ে মারা যান ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা এএসপি শিপন। এ ঘটনায় ১০ নভেম্বর আদাবর থানায় নিহতের বাবা ফয়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা  আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. ফারুক মোল্লা আসামি মামুনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার এজাহারে ডা. মামুনের নাম না থাকলেও তদন্তে তার নাম উঠে এসেছে। গতকাল এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মানসিক হাসপাতাল থেকে ডা. মামুন প্রায়ই মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী পাঠাতেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এএসপি শিপনকে তার কর্মস্থল থেকে ঢাকায় এনে স্বজনরা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তারা একজন চিকিৎসক পান। তিনি রোগীকে না দেখেই দুটি ইনজেকশন লিখে দেন। হাসপাতালের এক কর্মচারী নিচেই পুলিশ কর্মকর্তাকে ইনজেকশন পুশ করেন।

পরে শিপনের স্বজনরা হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. মামুনের কাছে যান। মামুন তাদের পরামর্শ দেন, তার হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর খুব ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। দ্রুত রোগীকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করলে তারা ভালো চিকিৎসা পাবেন। এরপরই মাইন্ড এইডের ম্যানেজার আরিফকে ফোন করে জানান, তিনি একজন রোগী পাঠাচ্ছেন। যেন দ্রুত ভর্তি করানো হয়।

ওই চিকিৎসকের কথায় আস্থা রেখে স্বজনরা মাইন্ড এইডের দিকে শিপনকে নিয়ে যান। শিপনকে হত্যার পর আবার মাইন্ড এইড হাসপাতাল থেকে ডা. মামুনকে ফোন করা হয়। মামুন গিয়ে মারা গেছেন জেনেও শিপনকে ওই হাসপাতাল থেকে বের করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ চালান। যেন কোনোভাবেই তার দায়িত্ব অবহেলা না বোঝা যায়।

ডিসি হারুন আরও বলেন, এএসপি শিপন হত্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাছাড়া দালাল চক্রের ২৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এএসপি শিপনের হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের বক্তব্যে মাইন্ড এইড হাসপাতালের অপকর্মে ডা. মামুনের সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী বের করে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলে ডা. মামুন ৩০ শতাংশ কমিশন পেতেন। কমিশনের লোভে তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী রেফার করতেন। মাইন্ড এইড হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদফতর বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন ছিল না।

২৮তম বিসিএসের কর্মকর্তা ডা. মামুন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করেছেন। তিনি মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-এডিকশন হসপিটাল ছাড়াও টাঙ্গাইলের ঢাকা ক্লিনিক এবং মাইন্ড ওয়েল হাসপাতালে রোগী দেখেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর