বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের বিষয় করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের বিষয় করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি। সোনার বাংলায় দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের কোনো বিষয়।

গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরে নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকারের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। নারী ও শিশুর প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও শীতকালে সংক্রমণ বৃদ্ধির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, আসন্ন শীত মৌসুমে যাতে করোনা বাড়তে না পারে সেজন্য নো মাস্ক, নো সার্ভিস নীতি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশের পয়েন্ট অব এন্ট্রিগুলোয় স্ক্রিনিং অব্যাহত রয়েছে। বিদেশফেরতদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কভিড প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নেওয়া কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। ৩ কোটি ভ্যাকসিন আমদানির লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মার তৃতীয় পক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

নারী-শিশু নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নির্মূলে সরকার কঠোর : সংরক্ষিত আসনের সদস্য বেগম মনিরা সুলতানার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। নারী ও শিশু নির্যাতন এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রচলিত সব আইনের আওতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্তরিকতা, দক্ষতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধ প্রতিরোধ করে এ ধরনের অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতনের শাস্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডের বিধান করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং সহিংসতার অভিযোগ পাওয়া গেলে তৎক্ষণাৎ জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০২০ সংশোধন করে ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদন্ডের বিধান করা হয়েছে। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা হিসেবে জাতীয় জরুরি সেনা ৯৯৯-এ যে কোনো অপরাধ প্রতিরোধের পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তৎক্ষণাৎ পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়।

সংসদ নেতা জানান, যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সমাজ থেকে নির্মূল করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ ও জড়িতদের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে।

সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংকট মোকাবিলায় ও ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্যে সরকার শুরু থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাণিজ্য সম্প্রসরণের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার করোনাভাইরাস সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন সেক্টরের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার্থে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা দেশের মোট জিডিপির ৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমত উল্লাহর প্রশ্নের লিখিত জবাবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে করোনা সংকট মোকাবিলায় তাঁর উত্থাপিত ছয় দফা প্রস্তাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ছয়টি বিশেষায়িত বিষয়ে ‘উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন’ নামক একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ সময় আমি আমার বক্তব্যে কভিড-১৯ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সংহতি এবং এ সংকট থেকে উত্তরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করি। আমি এ সময় এজেন্ডা ২০৩০, প্যারিস চুক্তি ও আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডাকে ভিত্তি করে এ সংকট থেকে উত্তরণে জাতিসংঘকে মূল অনুঘটকের ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়ে ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করি। তিনি বলেন, আমার উত্থাপিত ছয় দফা প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও কভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। অন্য বিশ্বনেতৃবৃন্দও বিভিন্ন সময় তাঁদের বক্তব্যে এ বিষয়গুলোর ওপরই গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, করোনাকালীন আমাদের সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে আমরা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতাসমূহের কাছ থেকে জরুরি আপৎকালীন অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ৩৫ মিলিয়ন ইয়েন বা ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপান। বাংলাদেশে কভিড-১৯ মোকাবিলায় এডিবি প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ও অনুদান দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ১০৫ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে তৈরি পোশাক খাতের জন্য অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানির কাছ থেকে তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। এ ছাড়া কভিড-১৯ মোকাবিলায় আইআইবি ব্যাংক বাংলাদেশের জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে।

মুজিব শতবর্ষে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী জেলা বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চকপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসনের নির্দেশ প্রদান করেন। জাতির পিতার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন-অসহায় পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীনের বাসস্থান নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে এ ধরনের ঘোষণা ও কর্মসূচি বিশ্বের আর কোনো সরকারপ্রধান এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি সমাজের সম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুরোধ করব তারা যদি সবাই অন্তত একটি বাড়ি অসহায় পরিবারের জন্য নির্মাণ করে দেন তবে মুজিব শতবর্ষে যেমন দেশে একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না, তেমনি সবাই মিলে আমরা নির্মাণ করব এক মানবিক ‘সোনার বাংলা’।

এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কভিড-১৯ মহামারী অভিঘাত সত্ত্বেও প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনয়নের নীতি গ্রহণ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি সুদৃঢ় হয়েছে। এ ছাড়া সবজি উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে কৃষি উন্নয়নে রোল মডেল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর