শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিনে যত সুখবর

ডিসেম্বরের শেষে ফাইজার, অক্সফোর্ডে বয়স্কদের আশার আলো মডার্নার সাফল্য, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রাশিয়া চীন ভারত

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ভ্যাকসিনে যত সুখবর

করোনাভাইরাস মহামারী থেকে মুক্তি পেতে ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় বিশ্ব। ফাইজার-বায়োএনটেকের দাবি, তাদের টিকা করোনা রোধে ৯৫ শতাংশ সক্ষম। অক্সফোর্ড জানিয়েছে, তাদের ভ্যাকসিন ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে। মডার্নার টিকা ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ, রাশিয়ার টিকা ৯২ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এগিয়ে চলেছে ভারত, চীনের টিকার হিউম্যান ট্রায়ালও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি কোম্পানির ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং হিউম্যান ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে ১০টি। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের তৈরি তিনটি ভ্যাকসিনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিক্যাল ক্যান্ডিডেটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফাইজার-বায়োএনটেক তাদের টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে জানিয়েছে। ভালো অগ্রগতি আছে অক্সফোর্ড আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন, মডার্না ও সিনোভ্যাকেরও। চূড়ান্ত পর্যায়ে আশানুরূপ ফল পেলে জরুরি অনুমোদন চাইবে কোম্পানিগুলো। সব প্রক্রিয়া শেষে নতুন বছরে বিশ্ব পাবে করোনা প্রতিরোধের টিকা।’

জানা গেছে, ফাইজারের ভ্যাকসিন তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে সফল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিন করোনা রোধে ৯৫ শতাংশ সক্ষম। তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। সব ঠিকঠাক চললে বড়দিনের আগেই বাজারে আসবে তাদের ভ্যাকসিন। মার্কিন ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থা ফাইজারের সঙ্গে এই ভ্যাকসিন তৈরিতে সহায়তা করছে জার্মান সংস্থা বায়োএনটেক। বায়োএনটেকের কর্ণধার উগুর সাহিন জানান, ‘সবকিছু ঠিকমতোই এগোচ্ছে। আশা করছি ডিসেম্বরের গোড়াতেই আমরা করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনের ছাড়পত্র পেয়ে যাব। বাজারে আনতে পারব ক্রিসমাসের আগেই।’

উগুর সাহিন আরও জানান, ট্রায়ালে দেখা গেছে, সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে করোনা প্রতিরোধে এই ভ্যাকসিন সমান কার্যকর। বিশেষত প্রবীণদের ক্ষেত্রে খুবই ভালো কাজ করছে এই ভ্যাকসিন। বিশ্বের ছয়টি দেশের প্রায় ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর ফাইজার-বায়োএনটেক করোনা টিকার পরীক্ষা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি মহামারী করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি ৬০-৭০ বছর বয়সীদের  ক্ষেত্রে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করছে। আশা করা হচ্ছে অক্সফোর্ড আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এই টিকা করোনায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক মানুষকে সুরক্ষা দেবে। গবেষকরা বলছেন, বিখ্যাত ব্রিটিশ চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত দ্বিতীয় দফার ফলাফলে ভ্যাকসিনটির ডোজ নেওয়া ৫৬০ সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা আশাজাগানিয়া। এ ছাড়া এই ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে ল্যানসেটে পিয়ার রিভিউ হওয়া ফলাফলে জানানো হয়েছে।

ভ্যাকসিনটি যারা নিচ্ছেন তাদের শরীরে বৃহৎ পরিসরে মহামারী কভিড-১৯-এর সংক্রমণ ঘটে কি না- তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ বিষয়টিও দেখার চেষ্টা করছেন গবেষকরা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক ফলাফল পাওয়ার আশা করছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি মডার্নার পরীক্ষাধীন ভ্যাকসিন ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এ ভ্যাকসিন হাতের নাগালে পেতে বেশ কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।

মডার্নার প্রেসিডেন্ট ড. স্টিফেন হোগ বলেন, ‘এটি সত্যিকার অর্থে একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দুটি আলাদা সংস্থার কাছ থেকে করোনা মোকাবিলায় ভ্যাকসিনের একই রকম ফলাফল পাওয়াটাই সবচেয়ে বেশি আশা দেখাচ্ছে। এটা আমাদের সবার মধ্যে এমন আশা জাগিয়ে তুলবে।’

ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ব্যাপক আকারে তাদের কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ‘কোভ্যাকসিন’-এর তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে। ভারতে পরিচালিত সর্ববৃহৎ কার্যকারিতা পরীক্ষা এবং কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য সংস্থাটি মোট ২৬ হাজার অংশগ্রহণকারীকে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

ভারত বায়োটেকের নির্বাহী পরিচালক সাই প্রসাদ গত মাসে বলেছিলেন, সংস্থাটি আগামী বছর জুনের মধ্যে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনটি চালু করার পরিকল্পনা করেছে। কার্যকারিতার তথ্য যদি ইতিবাচক হয়, তবে এটি ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে চালু করা হতে পারে। তাহলে এটি সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ডের পর ভারতে চালু হওয়া দ্বিতীয় টিকা হবে।

রাশিয়ায় কভিড-১৯-এর টিকার যে ট্রায়াল চলছিল তা ৯২ শতাংশ সফল বলে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে। এই ট্রায়ালে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের এক অংশকে স্পুটনিক ফাইভ নামের এই টিকা দেওয়া হয়েছিল। বাকিদের যে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল তাতে কোনো ভ্যাকসিনের ওষুধ ছিল না। এদের মধ্যে ২০ জনের শরীরে এই টিকা ৯২ শতাংশ সফলতা দেখিয়েছে। স্পুটনিক ফাইভ টিকা তৈরি করা হয়েছে মস্কোর এপিডেমিওলজি ও মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ক জাতীয় গবেষণা কেন্দ্রে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এসব ভ্যাকসিনের কোটি কোটি ডোজের ক্রয়াদেশ দিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনের ১০ কোটি ডোজ, ফাইজার-বায়োএনটেকের ৪ কোটি ডোজ এবং মডার্নার তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজ কেনার জন্য চুক্তি করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শরীরে রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে তা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুরক্ষা দিয়ে থাকে। কোনো ভাইরাসের ভ্যাকসিন জীবনভর সুরক্ষা দেয় আবার অনেক ভাইরাসের ভ্যাকসিন এক বছর সুরক্ষা দেয়। করোনাভাইরাসে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার সময়কাল কত দিন হবে সময়সাপেক্ষ। এ পরিস্থিতিতে গবেষকরা অত সময় পাচ্ছেন না যে, বিষয়টি গবেষণা করে দেখবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর