শিরোনাম
শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় মজনুর যাবজ্জীবন

আদালত প্রতিবেদক

ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় মজনুর যাবজ্জীবন

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের পরিবেশ : রায় ঘোষণা উপলক্ষে আসামি মজনুকে গতকাল কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায়ের পর তাকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতে হাজির করার পর মজনু ব্যাপক চিৎকার-চেঁচামেচি ও পুলিশ সদস্যদের গালাগাল শুরু করলে বিচারক, সাংবাদিক ও উৎসুক আইনজীবীদের বাইরে যেতে বলে শুধু জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের এজলাসে থাকার অনুমতি দেয় আদালত। পরে রুদ্ধদ্বার কক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়। এর আগে আসামি মজনুকে বেলা ২টার দিকে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসার পর উপস্থিত সবাইকে তিনি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে বলেন, ‘আমারে ছাইড়া দ্যান। ঢাকায় আর আসমু না। বাড়ি চইলা যামু। আমারে ছাইড়া দ্যান। আমার মা ছাড়া পৃথিবীতে কেউ নাই। আমাকে মায়ের কাছে যাইতে দ্যান। আমি এই কাম করি নাই। আমি বাড়ি যাব। আমাকে ছাইড়া না দিলে লাফ দিয়া মারা যাব। আমি ধর্ষণ করি নাই, ধর্ষণ করছে চারজন মিলা। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরতেছে না। আমি গরিব বইলা আমাকে ধরছে।’ পরে আদালত কক্ষে নেওয়ার পর চিৎকার করে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি পাগল মজনু। আইজকা ছাইড়া দ্যান। আমারে মারছে। কাশিমপুরে মশা। আমারে কোনো কিছু খাতি দ্যায় নাই।’ একপর্যায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাজত পুলিশের এক সদস্যের ঘাড় চেপে ধরেন আসামি মজনু। এরপর কাঁদতে কাঁদতে কোর্ট হাজতের ওসির কাছে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে গালাগাল শুরু করেন তিনি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে ২০টি ছবি দেখানো হয়। এর মধ্যে মজুনর ছবিও ছিল। তিনি মজনুকেই ধর্ষক হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন। এ ছাড়া মাইক্রোবায়োলজিক্যাল রিপোর্ট এবং ডিএনএ পরীক্ষাতেও ধর্ষণে মজনুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর ওই শিক্ষার্থীর মোবাইল নিয়ে গিয়ে এক নারীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন মজনু, যা পরে র‌্যাব উদ্ধার করে। সে কারণে মামলায় ধর্ষণের পাশাপাশি ছিনতাইয়ের অভিযোগে দন্ডবিধির ৩৯৪ ও ৪১১ ধারায় মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। তবে ছিনতাইয়ের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত ওই ধারা থেকে আসামিকে খালাস দিয়েছে। আসামি মজনুর পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড থেকে অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম রবিকে মজনুর পক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমি বলব, আসামি ন্যয়বিচার পাননি। আসামি উচ্চ আদালতে যেতে পারেন।’ মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে গলফ ক্লাব-সংলগ্ন স্থানে পৌঁছান। এ সময় আসামি মজনু তাকে পেছন থেকে গলা ধরে মাটিতে ফেলে দেন। তার গলা চেপে ধরেন। ছাত্রী চিৎকার করতে গেলে মজনু তাকে কিলঘুষি মারেন। ভয়ভীতি দেখান। ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ধর্ষণ করেন আসামি মজনু। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। পরে র?্যাব-১ অভিযান চালিয়ে মজনুকে গ্রেফতার করে। এরপর আসামি মজনু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করে ১৬ জানুয়ারি আদালতে জবানবন্দি দেন।

সর্বশেষ খবর