শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এইচএসসির ফল কীভাবে চূড়ান্ত হয়নি এখনো

সংশয়ে বিভাগ পরিবর্তন করা ফলপ্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার প্রাদুর্ভাবে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি)-জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী ফল নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে এবার শতভাগ শিক্ষার্থীই পাস করবে। তবে বিভাগ পরিবর্তনকারী ও মানোন্নয়নে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এ ব্যাপারে এইচএসসির ফলাফল সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিটি ফল তৈরির বিষয় নিয়ে কাজ করছে। দ্রুতই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে। এইচএসসির ফল তৈরির রূপরেখা ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পরই এ ব্যাপারে বলা যাবে।’ এইচএসসির পরই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়ায় যায়। ভবিষ্যতে তারা কোন পেশায় যেতে পারবে এ পর্যায়েই তা অনেকখানি নির্ধারিত হয়ে যায়। ফলে এইচএসসি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের জন্য মাত্র ২০ নম্বর নির্ধারণ করেছে। আগে ২০০ নম্বরের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসির জন্য নির্ধারিত ছিল ৮০ নম্বর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা দুই বছর ধরে পড়াশোনা করল, তার কোনো মূল্যায়ন না রেখে তিন-চার বছর আগে একজন শিক্ষার্থী কী করেছে, তা দিয়ে মূল্যায়ন করলে প্রশ্ন থেকেই যায়। যার ব্যাপক প্রভাব পড়বে উচ্চশিক্ষায়। কারণ অনেক শিক্ষার্থীই হয়তো এসএসসিতে কোনো কারণে খারাপ করেছিল, তবে এইচএসসিতে তা পোষানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ায় তা আর সম্ভব হলো না। এতে সে হয়তো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ারই সুযোগ পাবে না। উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের সাতটি বিষয়ে ১৩টি প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে হয়, যে বিষয়গুলোর প্রাপ্ত ফলাফল পরবর্তী সময়ে নম্বরপত্রে তোলা হয়। বায়োলজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর আলাদা পত্র রয়েছে এইচএসসিতে; তবে এসএসসিতে তা নেই। আর জেএসসিতে এসএসসির চেয়েও বিষয় কম। জানা যায়, ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমানের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। গতবার অকৃতকার্য হয়েছিল তিন লাখ ৪৮ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে এক বিষয়ে অকৃতকার্য এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন, দুই বিষয়ে অকৃতকার্য ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে অকৃতকার্য ৫১ হাজার ৩৪৮ জন এবার পরীক্ষার্থী রয়েছে। যারা এবার আর কোনো পরীক্ষায় অংশ না নিলেও উচ্চ মাধ্যমিকের সনদ পাবে। ফলে মূল্যায়নপদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছর এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির মূল্যায়ন হলে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জটিলতা তৈরি হবে। এ ছাড়া যারা এইচএসসিতে এসে বিভাগ পরিবর্তন করেছে, তাদের মূল্যায়ন নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে। কারণ তাদের এসএসসি ও এইচএসসির বেশির ভাগ বিষয়ের সঙ্গেই মিল নেই। শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও এ ধরনের বড় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এইচএসসি পরীক্ষা যখন বাতিল করা হয়, সেই সময়েই ইংলিশ মিডিয়ামের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি ঠিকই দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদেরও এবারের এইচএসসির ফলাফল ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এইচএসসি পরীক্ষার ফলকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। কিন্তু পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসির ফল এবার তারা কতটা মূল্যায়ন করবে তা নিয়ে সন্দিহান তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর