শিরোনাম
শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ঝুঁকি মোকাবিলায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে

জিন্নাতুন নূর

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ঝুঁকি মোকাবিলায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে

রাশেদা কে চৌধুরী

করোনাকালে শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়ার হার ও বাল্যবিয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি গবেষণায় এরই মধ্যে উঠে এসেছে। কিছুদিন আগেও বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম এবং আমাদের আশঙ্কা এখন সত্যি হতে যাচ্ছে। সরকার এ জন্য একটি পুুনরুদ্ধার পরিকল্পনাও করেছে। আর তা হলো শিক্ষা খাতের অর্জনগুলোকে ধরে রাখার ঝুঁকি প্রশমন করা। কিন্তু এ জন্য শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ লাগবে। দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে মাস্ক পরিয়ে আনতে হলে কোটি কোটি মাস্ক প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ শিক্ষায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও শিক্ষা ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার এরই মধ্যে ইতিবাচক প্রস্তুতি ও পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ‘কভিড-১৯ রিকোভারি অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান’-এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতি ও পুনরুদ্ধারের বিষয়ে বলা আছে। সেখানে স্কুল খোলার প্রস্তুতির বিষয়ে বলা আছে এবং এ বিষয়ে সর্বত্র একটি বার্তা পৌঁছানোর কথাও বলা আছে। অভিভাবকদের উদ্দেশে সন্তানদের বাল্যবিয়ে না দেওয়া এবং স্কুল না ছাড়ানোর জন্য বলা আছে। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের একটি বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে যে, আর সেটি হচ্ছে স্কুল-কলেজগুলো খোলার পর কর্তৃপক্ষ যেন শিক্ষার্থীদের গ্রহণের ব্যাপারে প্রস্তুত থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকারি প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে একথা ঠিক কিন্তু এই প্রস্তুতির মধ্যে যাদের আমরা হারিয়ে ফেলেছি এরই মধ্যে, অর্থাৎ যে শিক্ষার্থীরা কোনো মাধ্যমে যুক্ত হতে পারেনি বিশেষ করে অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিও এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়নি তারা হয়তো ভয়েই স্কুলে ফিরবে না। এই জায়গায় সরকারকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং যেসব শিক্ষার্থী করোনাকালীন সময়ে কোনো মাধ্যমে যুক্ত হতে পারেনি তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে এবং ফিরে আসার পরও তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। আবার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করা হলে সেখানেও এক ধরনের প্রস্তুতি আছে। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক সবাইকে প্রস্তুত করাও এক ধরনের প্রস্তুতি। আরেকটি প্রস্তুতি হচ্ছে শ্রেণিকক্ষের ভিতরে পঠন-পাঠন শুরু করা। এইখানে যারা পিছিয়ে পড়েছে, যারা যুক্ত হতে পারেনি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আবার এসব শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে আনলেই যে তারা পড়ালেখা পারবে এমন নয়। এ কারণে এসব শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে এমন শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রতিবছরই জানুয়ারিতে দেশে শিশু জরিপ হয়। এবার এই জরিপটি বিশেষ করে করতে হবে। কতজন শিশু স্কুলে নাম লেখাল আর কতজন লেখাল না সেই তথ্য জানতে হবে। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা আগামী সপ্তাহ থেকে মাঠে নামব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় সেখানে এখন যাওয়া যাচ্ছে না কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি। জানার চেষ্টা করব করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া এ কারণে কন্যাশিশুরা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে কিনা। আমাদের দেশে কন্যাশিশুরা আগে থেকেই বাল্যবিয়ের ঝুঁকির মধ্যে ছিল। কিন্তু করোনাকালে আয় ও খাদ্য নিরাপত্তার কারণে অভিভাবকরা মনে করছেন যে কন্যাশিশুটির বিয়ে দিয়ে দিলেই তারা দায়মুক্ত হবেন। ফলে করোনা কন্যাশিশুদের বাল্যবিয়ের ঝুঁকি আরও জটিল করে দিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশের একার নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বাল্যবিয়ের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি দেশটিতে সন্তানদের বিক্রি পর্যন্ত করে দেওয়া হচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর