সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার নতুন ধাক্কা ঠেকাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার নতুন ধাক্কা ঠেকাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। এক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।

গতকাল সকালে মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ এবং যশোরে তিনটি সেতু এবং পাবনায় একটি স্বাধীনতা চত্বরের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সারা দেশে যোগাযোগের একটা ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। ফলে আমাদের অর্থনীতির চাকা অনেক সচল। এই করোনাকালেও অর্থনীতি অটুট আছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মুজিববর্ষের কর্মসূচি জাঁকজমকভাবে পালন করতে না পারার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ব্যাপক আয়োজন ছিল। কিন্তু যেভাবে আমরা করতে চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবে করতে পারিনি। শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বের মানুষই এর জন্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। সেটা এরই মধ্যে ক্রয় করার জন্য আমরা আগাম টাকা দিয়ে বুকড করে রেখেছি। কাজেই সেদিক দিয়ে দেশবাসীর চিন্তার কিছু নেই। আমরা অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে আগে মানুষকে কীভাবে সুরক্ষিত করব, সেগুলোতে দৃষ্টি দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী করোনার মধ্যে সরকারের সাফল্য প্রসঙ্গে বলেন, দারিদ্র্যসীমা যেমন কমিয়ে এনেছি, মাথাপিছু আয়ও আমরা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের জীবনমান যে উন্নত করা যায় সেটাও আমরা প্রমাণ করেছি। সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ, বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনার ব্যবস্থা, সর্বোপরি অর্থনীতির চাকা যাতে সব সময় সচল থাকে সেসব দিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েই তাঁর সরকার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উন্নয়নের কাজ বাস্তবায়ন করছে। বারবার সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়ায় দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের বারবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার সুযোগ দিয়েছে জনগণ। সে কারণেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশ যে অন্ধকার যুগে ছিল, একটু আলোর ঝলকানি পেয়েছিল ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে। বাংলাদেশের জন্য একটা স্বর্ণযুগ ছিল তখন। কিন্তু আবারও ২০০১ সালের পর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারল না চক্রান্তের ফলে। বাংলাদেশের মানুষের জীবন থেকে আবারও প্রায় ৮টা বছর পিছিয়ে গেল। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যখন ফের আমরা সরকার গঠন করি, তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকারে আছি বলেই আজকে দেশের মানুষের উন্নতি করতে পারছি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের যে জীবনমান উন্নত করা যায়, সেটাও আমরা প্রমাণ করেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎসহ অর্থনীতির চাকা সব সময় সচল থাকাসহ সবদিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েই কাজ করার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ একটা সংগঠন। আওয়ামী লীগ হঠাৎ করেই কোনো কিছু করেনি। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখন থেকেই কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা ছিল। জাতির পিতা কিন্তু এসব পরিকল্পনা বহু আগেই করে গেছেন। তিনি আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানেই কিন্তু এ দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের কথা, মৌলিক চাহিদা পূরণের কথা, স্পষ্ট উল্লেখ করে গেছেন। সেই দিকে অনুসরণ করেই আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিই। ফলে অন্য কিছু করার প্রয়োজন হয়নি।

অনুষ্ঠানে জাতির পিতার আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে রিক্ত নিঃস্ব হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করব, সেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে, যা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত জীবন দেবেন, তার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ফেরিঘাট রাস্তায় শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) সেতু, মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার মধুমতি নদীর ওপরে এলাংখালী ‘শেখ হাসিনা সেতু’, যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় যশোর-খুলনা সড়কের ভাঙ্গাগেট (বাদামতলা) থেকে আমতলা জিসি ভায়া মরিচা, নাউলী বাজার সড়কে ভৈরব নদের ওপর সেতু এবং পাবনায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ উদ্বোধন করেন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন শেষে সচিবালয় প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গণভবন প্রান্ত ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ, যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। রূপগঞ্জ প্রান্তে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ অন্যরা যুক্ত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। পাবনায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী।

সর্বশেষ খবর