সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
পেনসিলভেনিয়ায় প্রেসিডেন্টের মামলা খারিজ

এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা ভোটারদের

প্রতিদিন ডেস্ক

এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা ভোটারদের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন একের পর এক মামলা করে ভোটের ফলাফল বানচালের চেষ্টা করছেন, তখন ভোটাররা তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। স্থানীয় সময় গত শনিবার একটি ফেডারেল আদালত ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য পেনসিলভেনিয়া থেকে ডাকযোগে আসা লাখ লাখ ভোট বাতিলের দাবিতে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের করা মামলা খারিজ করে দেওয়ার আগের দিন ভোটাররা এ মামলা করেছেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা, সিএনএন, এএফপি।

ফেডারেল আদালত ট্রাম্প শিবিরের মামলাই শুধু খারিজ করেনি, এই আদালতে বিচারক ট্রাম্পকে তীব্র ভর্ৎসনাও করেছেন। তার মামলার দাবিকে ‘ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব’ বলা হয়েছে। শনিবার পেনসিলভেনিয়ার উইলিয়ামস্পোর্টের ডিস্ট্রিক্ট জজ ম্যাথিউ ব্র্যান ট্রাম্পের মামলা খারিজ করে এ মন্তব্য করেন। খবরে বলা হয়, ট্রাম্প শিবির পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে ভোটের ফলাফল ‘সার্টিফাই’ করার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ম্যাথিউ ব্র্যানের আদালতে গিয়েছিল। ম্যাথিউ ব্র্যান বিচারক হন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওমামার মনোনয়নে। ট্রাম্প শিবিরের মামলার রায়ে ম্যাথিউ ব্র্যান উল্লেখ করেন, ‘একজন নাগরিকেরও ভোটাধিকার হরণ করার কোনো অধিকার তার নেই।’ বিচারক ম্যাথিউ ব্র্যান রায়ে লিখেছেন, ‘মামলায় ট্রাম্প শিবির যেসব দাবি করেছে, তা ফ্রাংকেনস্টাইনের দানবের মতো। এ মামলা ভিত্তিহীন ও অনুমানমূলক।’ খবরে বলা হয়, গত ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় উল্টে দিতে ট্রাম্পের চেষ্টা এই রায়ের মধ্য দিয়ে মরণ ধাক্কা খেয়েছে। পেনসিলভেনিয়ায় রিপাবলিকান ট্রাম্পের চেয়ে ৮০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে থেকে জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট বাইডেন। ট্রাম্পের মামলা আদালতে খারিজ হয়ে যাওয়ায় এ রাজ্যে বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করতে আর বাধা থাকল না।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করলেন ভোটাররা : নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মামলা করেছিলেন ট্রাম্প। তার প্রায় সব মামলাই খারিজ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এবার নির্বাচনের ফল অনুমোদনে বারবার বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গত শুক্রবার মিশিগান রাজ্যের ডেট্রয়েট শহরের একটি সংগঠন ও তিনজন ভোটার ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল জেলা আদালতে এ মামলা করেন। মিশিগান ওয়েলফেয়ার রাইটস অর্গানাইজেশন নামের এই সংগঠন ও তিন ভোটার মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিশিগানে নির্বাচনের ফল অনুমোদনে বাধা দেওয়ায় এবং আইনপ্রণেতাদের চাপ দেওয়া থেকে ট্রাম্পকে বিরত থাকতে আদালতকে আদেশ দিতে অনুরোধ করেন। সেই সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের বঞ্চিত করা বিশেষ করে ওয়েইন কাউন্টির ভোটারদের বঞ্চিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। ট্রাম্প ১৯৬৫ সালের ভোটাধিকার আইনের ১১ (বি) ধারা লঙ্ঘন করেছেন বলেও মামলায় দাবি করা হয়। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে,  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিশিগানের ভোটের ফল অনুমোদনে তাঁর দল, রাজ্য ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের চাপ দিচ্ছেন। ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা মূলত কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত শহরগুলোকে টার্গেট করে ভোটে জালিয়াতির মিথ্যা অভিযোগ বারবার করছেন এবং এসব অভিযোগ আদালত থেকে খারিজ হয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পুরো দেশে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের অন্তত ২৭০টি পেতে হয়। এর মধ্যে ২০ ইলেকটোরাল ভোটের রাজ্য পেনসিলভেনিয়ায় জয় নিশ্চিত হওয়ায় গত ৭ নভেম্বর বাইডেনের হোয়াইট হাউস নিশ্চিত হয়ে যায়। সব রাজ্যের ভোট গণনা শেষে বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬ ইলেকটোরাল ভোট, আর ২৩২ ইলেকটোরাল ভোট ট্রাম্পের পক্ষে গেছে। নির্বাচনে হার স্বীকার করতে নারাজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে এলেও কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোটের চিত্র দেখেই পরাজিত প্রার্থীরা হার স্বীকার করে নেন এবং বিজয়ী প্রার্থী সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু করে- বহু বছর ধরে এই রেওয়াজই চলে আসছে। কিন্তু ট্রাম্প তা না করায় সেই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।

হাল ছাড়ছেন না ট্রাম্প : সব দিকে হারের পর হার ঘটতে থাকলেও হাল ছাড়ছেন না ট্রাম্প। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এখন তিনি এমন কিছু করতে চাইছেন, যাতে ক্ষমতা থেকে তিনি সরে গেলেও বাইডেন খুব সুবিধায় না থাকতে পারেন। এ লক্ষ্যে তিনি নানা কূটকৌশলকে বেছে নিয়েছেন। এ সম্পর্কে গত শুক্রবার আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং সিনিয়র গবেষক ফ্রাঙ্ক এন. ভন হাইপেল ইরানের প্রেস টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জো বাইডেনের জন্য পরমাণু সমঝোতায় ফেরার পথ কঠিন করে তুলছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। ইরানের পরমাণু সমঝোতায় যাতে জো বাইডেন আবার যোগ না দিতে পারেন সেজন্য তার পথ কঠিন করে তুলতেই ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কারণ জো বাইডেন এ সমস্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে গেলেই রিপাবলিকানরা তার বিরুদ্ধে ইরানের প্রতি পক্ষপাতমূলক অন্ধ সমর্থনের অভিযোগ আনবেন। অধ্যাপক হাইপেল বলেন, ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাইডেন কতবার কংগ্রেসে ভোটাভুটি করবেন?

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর