বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ওসমান সিদ্দিক

আমেরিকার সম্মান ও নেতৃত্ব ফেরাতে বাইডেনকে রিসেট বোতাম চাপতে হবে

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

আমেরিকার সম্মান ও নেতৃত্ব ফেরাতে বাইডেনকে রিসেট বোতাম চাপতে হবে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনিয়র নেতাদের অন্যতম বাংলাদেশি-আমেরিকান ওসমান সিদ্দিক বলেছেন, নতুন প্রেসিডেন্টকে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ একদল কূটনীতিক মনোনয়ন দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির রিসেট বোতাম চাপতে হবে এবং বিশ্বজুড়ে আমেরিকার সম্মান ও নেতৃত্ব ফিরে পেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতিসহ নানা বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

কিশোরগঞ্জের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারের সন্তান ওসমান সিদ্দিক। ১৯৭০ সালে উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ওসমান সিদ্দিক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমলে (১৯৯৯-২০০১) ফিজি প্রজাতন্ত্র এবং অন্যান্য মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্রসমূহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত নির্বাচনে তিনি জো বাইডেনের ক্যাম্পেইন টিমের সিনিয়র অ্যাডভাইজার এবং অ্যাম্বাসাডর ইমেরিটাস টু ‘সাউথ এশিয়ান্স ফর বাইডেন’ হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন।

ওসমান সিদ্দিক বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পরই তাঁকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কূটনৈতিক রীতির পরিপন্থী গোঁয়ার্তুমিমূলক আচরণে গোটা বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করার মতো জঘন্য একটি পরিবেশ তৈরি করে গেছেন, তার অবসান ঘটাতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব প্রশ্নবিদ্ধ নয়। আমরাও এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি চাই এবং কেবল তখনই ঘটতে পারে যখন ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান কার্যকর হবে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সহায়তা পুনরুদ্ধার ও ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সৌদি আরব একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। তবে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুরতা উপেক্ষা করা যায় না। সিদ্দিক উল্লেখ করেন, অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। এ জন্য আরও অভিবাসন বিচারক নিযুক্ত করা এবং সত্যিকারের মামলাগুলো তৎক্ষণাৎ ও ন্যায়নিষ্ঠভাবে বিবেচনা করা উচিত। তিনি বলেন, ট্রাম্পের সীমানাপ্রাচীর থেকে তহবিলকে অন্যান্য অগ্রাধিকার প্রকল্পে সরিয়ে নেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি বাইডেনের রয়েছে তা দ্রুত কার্যকর করা উচিত। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি প্রসঙ্গে ওসমান সিদ্দিক বলেন, ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর আমাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর দিন আরও একটি পরিণতিপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। আমেরিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে। কয়েক দশকের আলোচনার পর বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ সিতে সীমাবদ্ধ করতে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৫ সালে বিশ্বের ১৯৭টি দেশ একত্রিত হয়েছিল। প্রাক-শিল্প সময়ের চেয়ে বিশ্ব ইতিমধ্যে ১ সি গরম ও প্রায় ৩ সি গরম হয়ে যাওয়ার পথে। এটি সমুদ্রস্তরের বর্ধমান, তীব্র উত্তাপের তরঙ্গ, অরণ্য অগ্নিকান্ড ও জলের ঘাটতিতে বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু আয়ের অবসান ঘটাতে, মৃত্যুর হার বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সমান্তরাল ক্ষয়ক্ষতি মানব জাতির ও তার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিপর্যয় ঘটাবে। ২০১৭ সালের ১ জুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছেন। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি অর্থাৎ শপথ গ্রহণের পরদিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এ চুক্তিতে পুনরায় যোগদানে তার অভিপ্রায় প্রকাশের একান্ত কর্তব্য হবে। তাঁর জলবায়ু সিজার হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে মনোনীত করা বিশ্ববাসীর কাছে অত্যন্ত জোরালো একটি বার্তা দিলেন যে বিশ্ব উষ্ণায়নের সমস্যাগুলো তাঁর প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে।

জেসিপিওএ প্রসঙ্গে ওসমান সিদ্দিকের অভিমত হচ্ছে, ইরানকে কখনই পারমাণবিক শক্তি হতে দেওয়া উচিত নয়। ওবামা-বাইডেন প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে ইরানের চুক্তিতে (জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন-জেসিপিওএ) চীন ও রাশিয়ার ভূমিকা ছিল অগ্রগামী। এ চুক্তি ইরানের বিদ্যমান ইউরেনিয়াম মজুদকে শতকরা ৯৮ ভাগ হ্রাস করে এবং এর সমৃদ্ধকরণ ও পুনরায় প্রসারণের ক্ষমতাগুলো সীমাবদ্ধতা সীমিত করে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) দ্বারা পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা এবং সুরক্ষার তদারকি ও সরাসরি প্রয়োগের ফলে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষাকে ব্যর্থ করে কার্যকরভাবে নিরপেক্ষ করা হয়েছিল। বাইডেন প্রশাসনকে ইরানের অন্যান্য বিপর্যয়কর আঞ্চলিক আচরণ ও নীতি সংশোধন করার জন্য অতিরিক্ত জোর দিয়ে শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং শর্তাবলির চুক্তিতে পুনরায় যোগদান করতে হবে।

ন্যাটোয় প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে সিদ্দিকের প্রত্যাশা হচ্ছে, ন্যাটো প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি ছিল আমেরিকার নেতৃত্বে অর্থাৎ আমেরিকা ছিল মেরুদন্ড এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এ নেতৃত্ব পুনরায় গ্রহণ করা উচিত। জাতিসংঘের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি পুনরুজ্জীবিত এবং দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত জাতিসংঘ হচ্ছে বিশ্বশান্তি, ন্যায়বিচার ও সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান। ইউএনডিপি, ইউএনআইডিও, ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ, আইএলওর মতো ইউএন সিস্টেমের মধ্যে থাকা সত্তাগুলো অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাপী চলমান কভিড-১৯ মহামারীকালে ডব্লিউএইচওর কাছে আমাদের সদস্যপদ পুনর্বহাল ও নবায়ন করা প্রয়োজন। ইউনেস্কো ও মানবাধিকার কাউন্সিলে পুনরায় যোগদান করতে হবে।

হৃদয়ে বাঙালিত্ব এবং প্রিয় মাতৃভূমির স্মৃতি জাগ্রত রেখে দৃপ্ত প্রত্যয়ে বহুজাতিক এ সমাজে এগিয়ে থাকা ওসমান সিদ্দিক বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সাইবারওয়ারফেয়ার, পারমাণবিক বিস্তার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বজনমত সুসংহত করতে সচেষ্ট থাকবেন। তিনি কেবল শৃঙ্খলা এবং ধারাবাহিকতা দিয়ে নয়, সম্মান, শালীনতা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গেও এটি করবেন। আমেরিকা এবং বিশ্ব সেদিনেরই অপেক্ষায় রয়েছে।

সর্বশেষ খবর