শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ম্যারাডোনার শেষ বিদায়

আসিফ ইকবাল

ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ম্যারাডোনার শেষ বিদায়

শোকের আবহ আর্জেন্টিনাসহ পুরো বিশ্বে। প্রিয় ম্যারাডোনার মৃত্যুতে উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী বোকা জুনিয়র্স ও রিভারপ্লেটের সমর্থকরাও মিলে গেছেন। বিশ্বজয়ী ফুটবলার, ফুটবল জাদুকর, কিংবদন্তির ফুটবলার, ফুটবলের মহানায়ক ও সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে বিদায় জানাতে বুয়েন্স এইরেসের রাস্তায় ঢল নেমেছিল লাখো মানুষের। প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ কাসা রোসাডা থেকে ১০ নম্বর জার্সি পরিহিত কফিনটি যখন এগিয়ে যাচ্ছিল রাস্তা ধরে, তখন দুই পাশে দাঁড়ানো লাখো ফুটবলপ্রেমী কেউ কাঁদছেন, কেউ চুমু খাচ্ছেন, কেউ আবার প্রার্থনা করছেন। ভক্তদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সমাহিত করা হয়েছে দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনাকে। প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ থেকে লাখো ভক্ত তাকে বিদায় জানালেও শহরের অদূরে বেইয়া ভিস্তা সমাধিস্থলে মা-বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করার সময় উপস্থিত ছিলেন শুধু পরিবারের সদস্যরা। শেষকৃত্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ম্যারাডোনার তিন সন্তান দালমা, জিয়াননা ও জানা ম্যারাডোনাসহ মাত্র ২৪ জন। বিশ্বফুটবলের কিংবদন্তি ম্যারাডোনা ফুটবলপ্রেমীদের শোকসাগরে ভাসিয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান ২৫ নভেম্বর। ৬০ বছর বয়সী ফুটবল তারকার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বিশ্ব। প্রিয় ফুটবলারের সম্মানার্থে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে আর্জেন্টাইন সরকার। তার শবদেহ রাখা হয় প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ কাসা রোসাডায়। বৃহস্পতিবার ম্যারাডোনাকে শ্রদ্ধা জানাতে এক কিলোমিটার লম্বা লাইন তৈরি করেন ভক্তরা। বিকাল ৪টায় প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের রক্ষীরা দরজা বন্ধ করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ভক্তদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করতে হয়। এতে বহু ভক্ত আহত হয়েছেন। তারপরও প্রিয় ফুটবলারকে একনজর দেখতে সবকিছু সহ্য করেছেন ভক্তরা। আবার দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও অনেকে দেখতে পারেননি।

ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনা জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার ছোট শহর লুসানে। দরিদ্র পিতা-মাতার তিন কন্যা সন্তানের পর ম্যারাডোনার জন্ম। মাত্র ৯ বছর বয়সে বলবয় হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। বলবয় হিসেবে কাজ করতে করতে তিনি এক সময় বোকা জুনিয়র্স জুনিয়র দলে নাম লেখান এবং হয়ে ওঠেন ক্লাবের মূল ভরসা। ১৯৭৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে নাম লেখান আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে। ১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েন। চার বছর পর ১৯৮২ সালে অভিষেক। ১৯৮৬ সালে একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ উপহার দেন। ১৯৯০ সালেও ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু বাজে রেফারিংয়ে রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ম্যারাডোনাকে। শেষ বিশ্বকাপ খেলেন ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৭ সালে বিদায় জানান জাতীয় দলকে। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে ৯১টি আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলা ম্যারাডোনা গোল করেছেন ৩৪টি। বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচে গোল তার ৮টি।

২৫ নভেম্বর মারা যাওয়া ম্যারাডোনা এখন স্মৃতির খাতায় নাম লিখেছেন। এ স্মৃতি নিয়েই ফুটবল বিশ্ব বেঁচে থাকবে আজীবন।

সর্বশেষ খবর