সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ কবে পাবে ভ্যাকসিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ কবে পাবে ভ্যাকসিন

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় ভ্যাকসিন পেতে বেগ পেতে হবে বাংলাদেশকে। আগামী বছরের মার্চে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা থাকলেও তা পুনরায় ট্রায়ালে যাওয়ায় অনুমোদন পেতে দেরি হবে। এতে করে ভ্যাকসিন প্রাপ্যতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কারণ এখন পর্যন্ত শুধু অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেতে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ভ্যাকসিন তৈরি এবং ট্রায়ালের পদ্ধতিতে ভুল হয়েছিল। এর জেরে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা নিয়ে তারা যতটা আশাবাদী ছিলেন, এটি অনেক ক্ষেত্রে ততটা কার্যকর হয়নি। ট্রায়ালে যাদের শরীরে কম ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ কার্যকর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন। আর যারা পুরোমাত্রায় ডোজ নিয়েছেন, তাদের  শরীরে অনেকটাই কম ৬০ থেকে ৬২ শতাংশ কাজ করছে ওই ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনের নিয়ম অনুযায়ী, রোগ প্রতিরোধের জন্য দুটি ডোজই কার্যকর। তাহলে পুরোমাত্রায় ডোজ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে এতটা কম কাজ করল কেন? অ্যাস্ট্রাজেনেকার সিইও পাস্কাল সরিয়েট বলছেন, ‘যেহেতু আমাদের গবেষণায় ত্রুটি দেখা দিয়েছে, তাই আমাদের ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে হবে। আর সেজন্য সম্ভবত আমরা অতিরিক্ত একটি ট্রায়ালের পথে হাঁটব।’

এই ভ্যাকসিন পেতে সরকার, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কিনতে চেয়েছিল চার ডলারের বিনিময়ে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবহন খরচ সব মিলিয়ে এর সঙ্গে পরে যোগ হবে আরও এক ডলার। সেখান থেকে বাংলাদেশ কিনতে পারবে ৩০ মিলিয়ন ডোজ। আর এ জন্য অর্থ বিভাগ থেকে প্রায় ৭৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পিছিয়ে যাচ্ছে পরিকল্পনা মাফিক কাজ।

ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই বা গ্যাভি-টিকা বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট) কাজ করছে। আর যখনই ভ্যাকসিন আসুক না কেন, সারা পৃথিবীর মানুষ যেন একসঙ্গে পায় সে বিষয়ে গত ৪ জুন গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ‘কোভ্যাক্স’ ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে পৃথিবীর সবাই যেন সমহারে ভ্যাকসিন পায়। তবে এ ভ্যাকসিন পেতে আরও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। এখান থেকে ৬৮ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ করোনার ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। প্রতিজন দুই ডোজ করে এই ভ্যাকসিন পাবেন। মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ শতাংশ হারে ধাপে ধাপে বাংলাদেশ এই ভ্যাকসিন পাবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মা, শিশু ও  কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক এক অনুষ্ঠানে বলেন, যারা আগে জাতীয় ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা জমা দেবে তারাই আগে ভ্যাকসিন পাবে। গ্যাভি যখন থেকে পরিকল্পনা জমা নেওয়া শুরু করবে, আশা করছি আমরা প্রথম দিনই আমাদের পরিকল্পনা জমা দিতে পারব।’ তিনি জানান, গত জুলাই মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশ কোভ্যাক্সে আবেদন করে এবং গ্যাভি সেটি গ্রহণ করে গত ১৪ জুলাই। বাংলাদেশ গ্যাভির কাছ থেকে ৬৮ মিলিয়ন বা ছয় কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন পাবে (দুই ডোজ) ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য। সে হিসাবে প্রথমে ৩৪ মিলিয়ন বা তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য প্রথম ধাপে করোনার ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। তবে গ্যাভি এটা বিনা পয়সায় দেবে না। এ জন্য কো ফিন্যান্সিংয়ে যেতে হবে সরকারকে। এটা এক দশমিক ছয় থেকে দুই ডলারের মধ্যে কিনতে পারব। আর বাংলাদেশ এ নিয়ে কাজ করছে।’ এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে বায়োএনটেক ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ৭০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। কিন্তু কোল্ড চেইন ব্যবস্থা না থাকায় ফাইজার ও মডার্নার সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো চুক্তি করেনি। যদিও ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় টেকনিক্যালি অ্যাডভাইজরি কমিটির ১৯তম সভায় গ্যাভির ভ্যাকসিন পেতে বেশ দেরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সেই সময় কমিটি কোনো একটি ভ্যাকসিনের জন্য কাজ না করে একাধিক উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য বলেছিল। যেসব ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার কোল্ড চেইনের ব্যবস্থা নেই তার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা করেছেন। সেখানে সমস্যা হয়েছে, সেটি থেকে আসলে তারা কত দ্রুত বের হয়ে আসবে সেটি বলা কঠিন। অক্সফোর্ড এখন আমেরিকাতে ৩০ হাজার মানুষের ওপর একটি গবেষণা শুরু করেছে। সেই গবেষণার ফলাফলের ওপর অনুমোদন নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে ব্রাজিল, ইউকে ও ভারতে যে গবেষণাগুলো করছে সেটি একেকটা একেক ডিজাইনের এগুলো দিয়ে গ্লোবালি অনুমোদন পেতে অসুবিধা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর