সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থাহীনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থাহীনতা

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অসততা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ অসংখ্য নাগরিকের ভোটাধিকার হরণ করেছে। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের ব্যাপক আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে, তারা চাইলেও ভোট দিতে পারবেন না। আর ভোট দিলেও তাতে ‘ফলাফল’ প্রভাবিত হবে না- যারা জয়ী হওয়ার তারাই জয়ী হবেন। গতকাল সুজনের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক অনলাইন বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধে এসব কথা বলেন তিনি। সুজন সম্পাদক বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নূরুল হুদা কমিশনের সব ক্ষমতা থাকলেও সে ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে খুলনা, গাজীপুর, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ফলাফল বহুলাংশে বানোয়াট। তাই এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাই আজ ভেঙে পড়েছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে ফেলেছে। আমাদের রাজনীতি আজ বহুলাংশে বিরোধী দল শূন্য হয়ে পড়েছে, যার দায় অবশ্য আমাদের প্রধান বিরোধী দলও এড়াতে পারে না। ফলে বহু নাগরিকের মধ্যে আজ চরম অসন্তোষ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতা দিয়ে কয়েকটি সুস্পষ্ট দায়িত্ব দিয়েছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশনকে আইন ও বিধি-বিধানের সঙ্গে প্রয়োজনে সংযোজন করারও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতাও কমিশনের রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বহু অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন কমিশন ছিল নির্বিকার। যদিও সরকার ও রাজনৈতিক দল, বিশেষত ক্ষমতাসীন দল না চাইলে সবচেয়ে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রায় অসম্ভব। তবে কমিশন চাইলে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। অনেকের ধারণা- এক তরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন সাহসী ভূমিকা নিলে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসই হয়তো ভিন্ন হতো।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও কুক্ষিগতকরণ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কতগুলো প্রতিষ্ঠান- সাংবিধানিক, বিধিবদ্ধ ও রাষ্ট্র-বহির্ভূত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি নজরদারিত্বের কাঠামো গড়ে তোলা হয়। এই নজরদারিত্বের কাঠামো কার্যকারিতা প্রদর্শন করলেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও কার্যকর হয়।

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখেন সুজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সুজন নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার, সৈয়দ আবুল মকসুদ, তোফায়েল আহমেদ, বিচারপতি এম এ মতিন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ ম-ল, ফটোসাংবাদিক শহীদুল আলম, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, সুজন সহ-সভাপতি ড. হামিদা হোসেন, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য সি আর আবরার, একরাম হোসেন, সুজন নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দর খান, সফিউদ্দিন আহমেদ, আকবর হোসেন প্রমুখ।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর